পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\O ঘোডা স্বাক্টর কাজ প্রায় শেষ হয়ে যখন ছুটির ঘণ্টা বাজে ব’লে, হেনকালে ব্ৰহ্মার মাথায় একটা ভাবোদয় হল । 凸 ভাণ্ডারীকে ডেকে বললেন, "ওহে ভাণ্ডারী, আমার কারখানাঘরে কিছু কিছু পঞ্চভূতের জোগাড় করে আনো, আর-একটা নতুন প্রাণী স্মৃষ্টি করব।” ভাণ্ডারী হাত জোড় করে বললে, “পিতামহ, আপনি যখন উৎসাহ করে হাতি গড়লেন, তিমি গড়লেন, অজগর সপ গড়লেন, সিংহ ব্যাঘ্ৰ গড়লেন, তখন হিসাবের দিকে আদৌ খেয়াল করলেন না। যতগুলো ভারী আর কড়া জাতের ভূত ছিল সব প্রায় নিকাশ হয়ে এল। ক্ষিতি অপ তেজ তলায় এসে ঠেকেছে। থাকবার মধ্যে আছে মরুং ব্যোম, তা সে যত চাই ।” চতুর্মুখ কিছুক্ষণ ধরে চারজোড়া গোফে তা দিয়ে বললেন, “আচ্ছা ভালো, ভাণ্ডারে যা আছে তাই নিয়ে এসো, দেখা যাক ৷” এবারে প্রাণীটিকে গড়বার বেলা ব্রহ্মা ক্ষিতি-আপ-তেজটাকে খুব হাতে রেখে খরচ করলেন। তাকে না দিলেন শিঙ, না দিলেন নর্থ ; আর দাত যা দিলেন তাতে চিবনে চলে, কামড়ানো চলে না । তেজের ভাণ্ড থেকে কিছু খরচ করলেন বটে, তাতে প্রাণীটা যুদ্ধক্ষেত্রের কোনো কোনো কাজে লাগবীর মতো হল কিন্তু তার লড়াইয়ের শখ রইল না । এই প্রাণীটি হচ্ছে ঘোড়া। এ ডিম পাড়ে না তৰু বাজারে তার ডিম নিয়ে একটা গুজব আছে, তাই একে দ্বিজ বলা চলে । আর যাই হোক, স্বষ্টিকর্তা এর গড়নের মধ্যে মরুং আর ব্যোম একেবারে ঠেলে দিলেন । ফল হল এই যে, এর মনটা প্রায় ষোলো-আনা গেল মুক্তির দিকে। এ হাওয়ার আগে ছুটতে চায়, অসীম আকাশকে পেরিয়ে যাবে ব'লে পণ ক'রে বলে । অন্য সকল প্রাণী কারণ উপস্থিত হলে দৌড়য় ; এ দৌড়য় বিনা কারণে ; যেন তার নিজেই নিজের কাছ থেকে পালিয়ে যাবার একান্ত শখ। কিছু কাড়তে চায় না, কাউকে মারতে চায় না, কেবলই পালাতে চায়– পালাতে পালাতে একেবারে বুদ হয়ে যাবে, কিম হয়ে যাবে, ভো হয়ে যাবে, তার পরে 'না' হয়ে যাবে, এই তার মংলব । জ্ঞানীরা বলেন, ধাতের মধ্যে মরুংবোম যখন ক্ষিতি-অপ-তেজকে সম্পূর্ণ ছাড়িয়ে ওঠে তখন এইরকমই ঘটে ।