পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8° রবীন্দ্র-রচনাবলী २ বুড়োর মন ভাঙল, বুড়োর দিনও চলে না। শেষকালে তার মেয়ে এলে তাকে বললে, “তুমি আমার বাড়িতে এসো।” জামাই বললে, “খাও দাও, আরাম করে, আর সবজির খেত থেকে গোরু বাছুর খেদিয়ে রাখো ।” বুড়োর মেয়ে থাকে অষ্টপ্রহর ঘরকরনার কাজে । তার জামাই গড়ে মাটির প্রদীপ, আর নৌকো বোঝাই করে শহরে নিয়ে যায়। নতুন কাল এসেছে সে কথা বুড়ো বোঝে না, তেমনিই সে বোঝে না যে, তার নাৎনির বয়স হয়েছে ষোলো । 剿 যেখানে গাছতলায় বসে বুড়ে খেত আগলায় আর ক্ষণে ক্ষণে ঘুমে ঢুলে পড়ে সেখানে নাংনি গিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে ; বুড়োর বুকের হাড়গুলো পর্যন্ত খুশি হয়ে ওঠে। সে বলে, “কী দাদি, কী চাই ।” নাংনি বলে, “আমাকে পুতুল গড়িয়ে দাও, আমি খেলব ।” বুড়ে বলে, “আরে ভাই, আমার পুতুল তোর পছন্দ হবে কেন ।” নাৎনি বলে, “তোমার চেয়ে ভালো পুতুল কে গড়ে শুনি ।” বুড়ে বলে, “কেন, কিষণলাল ।” । নংনি বলে, “ইস্ ! কিষণলালের সাধ্যি !” দুজনের এই কথা-কাটাকাটি কতবার হয়েছে। বারে বারে একই কথা । তার পরে বুড়ো তার ঝুলি থেকে মালমশলা বের করে ; চোখে মস্ত গোল চশমাট আঁটে । নাৎনিকে বলে, “কিন্তু দাদি, ভুট্টা যে কাকে খেয়ে যাবে।” নাখনি বলে, "দাদা, আমি কাক তাড়াব ।” বেলা বয়ে যায় ; দূরে ইদারা থেকে বলদে জল টানে, তার শব্দ আসে ; নাখনি কাক তাড়ায়, বুড়ো বলে বসে পুতুল গড়ে । VG বুড়োর সকলের চেয়ে ভয় তার মেয়েকে । সেই গিরির শাসন বড়ো কড়া, তার সংসারে সবাই থাকে সাবধানে । বুড়ো আজ একমনে পুতুল গড়তে বসেছে ; ছশ হল না, পিছন থেকে তার মেয়ে ঘন ঘন হাত দুলিয়ে আসছে। *