পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিকা Ꮌ8☾ ছেলেটি তাকে ভালো করে দেখলে। তার পরে বললে, “তোমাকে কিন্তু হেরে যেতে হবে ।” রাজা বললেন, “আমি খুব ভালো হারতে পারি। পরীক্ষা করে দেখো ।” সেদিন রাক্ষসবধ এতই সুচারুরূপে হতে লাগল যে, ছেলেটি কিছুতে রাজাকে ছুটি দিতে চায় না। সেদিন এক বেলাতে তাকে দশবারোটা রাক্ষসের মরণ একলা মরতে হল। মরতে মরতে হাপিয়ে উঠলেন । ত্রেতাযুগে পঞ্চবটীতে যেমন পাখি ডেকেছিল সেদিন সেখানে ঠিক তেমনি করেই ডাকতে লাগল। ত্রেতাযুগে সবুজ পাতার পর্দায় পর্দায় প্রভাত-আলো যেমন কোমল ঠাটে আপন স্বর বেঁধে নিয়েছিল আজও ঠিক সেই স্বরই বাধলে । রাজার মন থেকে ভার নেমে গেল । মন্ত্রীকে ডেকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, "ছেলে মেয়ে দুটি কার ।” মন্ত্রী বললে, “মেয়েটি আমারই, নাম রুচিরা। ছেলের নাম কৌশিক, ওর বাপ গরিব ব্রাহ্মণ, দেবপূজা করে দিন চলে।” রাজ বললেন, “যখন সময় হবে এই ছেলেটির সঙ্গে ঐ মেয়ের বিবাহ হয়, এই আমার ইচ্ছ{।” শুনে মন্ত্রী উত্তর দিতে সাহস করলে না, মাথা হেঁট করে রইল। २ দেশে সবচেয়ে যিনি বড়ে পণ্ডিত রাজা তার কাছে কৌশিককে পড়তে পাঠালেন। যত উচ্চবংশের ছাত্র তার কাছে পড়ে । আর পড়ে রুচিরা । কৌশিক যেদিন তার পাঠশালায় এল সেদিন অধ্যাপকের মন প্রসন্ন হল না। অন্য সকলেও লজ্জা পেলে । কিন্তু, রাজার ইচ্ছা । সকলের চেয়ে সংকট রুচিরার । কেননা, ছেলেরা কানাকানি করে। লজ্জায় তার মুখ লাল হয়, রাগে তার চোখ দিয়ে জল পড়ে। কৌশিক যদি কখনো তাকে পুথি এগিয়ে দেয় সে পুথি ঠেলে ফেলে। যদি তাকে পাঠের কথা বলে সে উত্তর করে না । রুচির প্রতি অধ্যাপকের স্নেহের সীমা ছিল না। কৌশিককে সকল বিষয়ে সে এগিয়ে যাবে এই ছিল তার প্রতিজ্ঞ, রুচিরও সেই ছিল পণ । মনে হল, সেটা খুব সহজেই ঘটবে, কারণ কৌশিক পড়ে বটে কিন্তু একমনে নয়। তার সাতার কাটতে মন, তার বনে বেড়াতে মন, সে গান করে, সে যন্ত্র বাজায়।