পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিক 8ఏ কাঠকুড়নি মেয়ে বলে, “এখন আমি করব কী ! আমার সেবা যে বৃথা হতে চলল ।” তার পর থেকে ফুল তুলে সে তপস্বীর পায়ের কাছে রেখে যায়, তপস্বী জানতেও পারে না । মধ্যাহ্নে রোদ যখন প্রখর হয় লে আপন আঁচলটি তুলে ধীরে ছায়া করে দাড়িয়ে থাকে । কিন্তু, তপস্বীর কাছে রোদও যা ছায়াও তা । কৃষ্ণপক্ষের রাতে অন্ধকার যখন ঘন হয় কাঠকুড়নি সেখানে জেগে বলে থাকে। তাপসের কোনো ভয়ের কারণ নেই, তবু সে পাহারা দেয়। २ একদিন এমন ছিল যখন এই কাঠকুড়নির সঙ্গে দেখা হলে নবীন তপস্বী স্নেহ করে জিজ্ঞাসা করত, “কেমন আছ ।” কাঠকুড়নি বলত, “আমার ভালোই কী আর মন্দই কী । কিন্তু, তোমাকে দেখবার লোক কি কেউ নেই। তোমার মা, তোমার বোন ?” সে বলত, “আছে সবাই, কিন্তু আমাকে দেখে হবে কী । তারা কি আমায় চিরদিন বাচিয়ে রাখতে পারবে ।” কাঠকুড়নি বলত, “প্রাণ থাকে না বলেই তো প্রাণের জন্তে এত দরদ ।” তাপস বলত, “আমি খুজি চিরদিন বাচবার পথ । মানুষকে আমি অমর করব।” এই বলে সে কত কী বলে যেত ; তার নিজের সঙ্গে নিজের কথা, সে কথার মানে বুঝবে কে। কাঠকুড়নি বুঝত না, কিন্তু আকাশে নবমেঘের ডাকে ময়ুরীর যেমন হয় তেমনি তার মন ব্যাকুল হয়ে উঠত। তার পরে আরও কিছু দিন যায় । তপস্বী মৌন হয়ে এল, মেয়েকে কোনো কথা বলে না । তার পরে আরও কিছু দিন যায়। তপস্বীর চোখ বুজে এল, মেয়েটির দিকে চেয়ে দেখে না । মেয়ের মনে হল, সে আর ঐ তাপসের মাঝখানে যেন তপস্তার লক্ষ যোজন ক্রোশের দূরত্ব । হাজার হাজার বছরেও এতটা বিচ্ছেদ পার হয়ে একটুখানি কাছে আসবার আশা নেই । তা নাই বা রইল আশা। তবু ওর কান্না আসে ; মনে মনে বলে, দিনে একবার