পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>Qミ 。 রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রথম চিঠি বধুর সঙ্গে তার প্রথম মিলন, আর তার পরেই সে এই প্রথম এসেছে প্রবালে। চলে যখন আসে তখন বধূর লুকিয়ে কান্নাটি ঘরের আয়নার মধ্যে দিয়ে চকিতে ওর চোখে পড়ল । মন বললে, “ফিরি, দুটো কথা বলে আলি।” কিন্তু, সেটুকু সময় ছিল না । সে দূরে আসবে বলে একজনের দুটি চোখ বয়ে জল পড়ে, তার জীবনে এমন সে আর-কখনো দেখে নি । * পথে চলবার সময় তার কাছে পড়ন্ত রোদঘুরে এই পৃথিবী প্রেমের ব্যথায় ভরা হয়ে দেখা দিল । সেই অসীম ব্যথার ভাণ্ডারে তার মতো একটি মানুষেরও নিমন্ত্রণ আছে, এই কথা মনে করে বিস্ময়ে তার বুক ভরে উঠল। যেখানে সে কাজ করতে এসেছে সে পাহাড় । সেখানে দেবদারুর ছায়। বেয়ে বাকা পথ নীরব মিনতির মতো পাহাড়কে জড়িয়ে ধরে, আর ছোটো ছোটে। ঝরনা কাকে যেন আড়ালে আড়ালে খুঁজে বেড়ায় লুকিয়েচুরিয়ে । আয়নার মধ্যে যে ছবিটি দেখে এসেছিল আজ প্রকৃতির মধ্যে প্রবাসী সেই ছবিরই আভাস দেখে, নববধূর গোপন ব্যাকুলতার ছবি। २ আজ দেশ থেকে তার স্ত্রীর প্রথম চিঠি এল । লিখেছে, “তুমি কবে ফিরে আসবে। এসে এসো, শীঘ্র এসো। তোমার দুটি পায়ে পড়ি ।” এই আসায়াওয়ার সংসারে তারও চলে যাওয়া আর তারও ফিরে আসার যে এত দাম ছিল, এ কথা কে জানত। সেই দুটি আতুর চোখের চাউনির সামনে সে নিজেকে দাড় করিয়ে দেখলে, আর তার মন বিস্ময়ে ভরে উঠল । ভোরবেলায় উঠে চিঠিখানি নিয়ে দেবদারুর ছায়ায় সেই বাক পথে সে বেড়াতে বেরোল। চিঠির পরশ তার হাতে লাগে আর কানে যেন সে শুনতে পায়, “তোমাকে না দেখতে পেয়ে আমার জগতের সমস্ত আকাশ কাল্পায় ভেলে গেল ।” মনে মনে ভাবতে লাগল, “এত কারার মূল্য কি আমার মধ্যে আছে।”