পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিক SAL NL এমন সময় স্বর্য উঠল পূর্বদিকের নীল পাহাড়ের শিখরে। দেবদারুর শিশিরভেজ পাতার ঝালরের ভিতর দিয়ে আলো ঝিলমিল করে উঠল । হঠাৎ চারটি বিদেশিনী মেয়ে দুই কুকুর সঙ্গে নিয়ে রাস্তার বাকের মুখে তার সামনে এসে পড়ল। কী জানি কী ছিল তার মুখে, কিম্বা তার সাজে, কিম্বা তার চালচলনে— বড়ো মেয়েদুটি কৌতুকে মুখ একটুখানি বাকিয়ে চলে গেল । ছোটো মেয়েদুটি হাসি চাপবার চেষ্টা করলে, চাপতে পারলে না ; ছজনে দুজনকে ঠেলাঠেলি করে খিলখিল করে হেসে ছুটে গেল । কঠিন কৌতুকের ইলিতে ঝরনাগুলিরও স্বর ফিরে গেল। তার হাততালি দিয়ে উঠল। প্রবাসী মাথা ইেট করে চলে আর ভাবে, “আমার দেখার মূল্য কি এই হাসি।” সেদিন রাস্তায় চলা তার আর হল না। বাসায় ফিরে গেল, একলা ঘরে বসে চিঠিখানি খুলে পড়লে, “তুমি কবে ফিরে আসবে। এসো, এসো, শীঘ্র এসো, তোমার দুটি পায়ে পড়ি ।” রথযাত্রা রথযাত্রার দিন কাছে । তাই রানী রাজাকে বললে, "চলো, রথ দেখতে যাই ।” রাজা বললে, “আচ্ছা ।” Ει ঘোড়াশাল থেকে ঘোড়া বেরোল, হাতিশাল থেকে হাতি । ময়ুরপংখি যায় সারে সারে, আর বল্লম হাতে সারে সারে সিপাইসান্ত্রি। দাসদাসী দলে দলে পিছে পিছে চলল । কেবল বাকি রইল একজন। রাজবাড়ির কাটার কাঠি কুড়িয়ে আনা তার কাজ । সর্দার এসে দয়া করে তাকে বললে, "ওরে, তুই যাবি তো আয় ।” সে হাত জোড় করে বললে, “আমার যাওয়া ঘটবে না।” রাজার কানে কথা উঠল সবাই সঙ্গে যায়, কেবল সেই দুঃখীটা যায় না। রাজা দয়া করে মন্ত্রীকে বললে, “ওকেও ডেকে নিয়ো ।” রাস্তার ধারে তার বাড়ি । হাতি যখন সেইখানে পৌছল মন্ত্রী তাকে ডেকে বললে, "ওরে দুঃখী, ঠাকুর দেখবি চল ।”