পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ ©ᏔᎯ রবীন্দ্র-রচনাবলী আর-এক ছেলে এসে বলে, “আমরা ফুল তুলব।” “কোথায় ।” "ঐযে, তোমার পুতুলের ঘরের শিয়রে যে চাপাগাছ আছে ঐ গাছ থেকে ।” মেয়ে তাকে তাড়িয়ে দেয় ; বলে, “এ ফুল কেউ ছুতে পাবে না।” আর-এক ছেলে এসে বলে, “প্রদীপ ধরে আমাদের পথ দেখিয়ে দাও।” *প্রদীপ কোথায় ।” “ঐ যেটা তোমার পুতুলের ঘরে জাল ।” মেয়ে তাকে তড়িয়ে দেয় ; বলে, “ও প্রদীপ ওখান থেকে সরাতে পারব না ।” NO এক ছেলের দল যায়, আর-এক ছেলের দল আসে । মেয়েটি শোনে তাদের কলরব, আর দেখে তাদের নৃত্য । ক্ষণকালের জন্য অন্যমনস্ক হয়ে যায়। আমনি চমকে ওঠে, লজ্জা পায় । মেলার দিন কাছে এল । পাড়ার বুড়ে এসে বললে, “বাছা, মেলা দেখতে যাবি নে ?” মেয়ে বললে, “আমি কোথাও যাব না ।” সঙ্গিনী এলে বললে, “চল, মেলা দেখবি চল ।” মেয়ে বললে, “আমার সময় নেই ।” ছোটো ছেলেটি এসে বললে, “আমার সঙ্গে নিয়ে মেলায় চলো-না।” মেয়ে বললে, “যেতে পারব না, এইখানে যে আমার পুজো ।” 8 একদিন রাত্রে ঘুমের মধ্যেও সে যেন শুনতে পেলে সমুদ্রগর্জনের মতো শব্দ । দলে দলে দেশবিদেশের লোক চলেছে— কেউ বা রথে, কেউ বা পায়ে হেঁটে ; কেউ বা বোঝা পিঠে নিয়ে, কেউ বা বোঝা ফেলে দিয়ে । সকালে যখন সে জেগে উঠল তখন যাত্রীর গানে পাখির গান আর শোনা যায় না। ওর হঠাৎ মনে হল, ‘আমাকেও যেতে হবে।’ অমনি মনে পড়ে গেল, ‘আমার যে পুজে৷ আছে, আমার তো যাবার জো নেই।’ তখনি ছুটে চলল তার বাগানের দিকে যেখানে মূর্তি সাজিয়ে রেখেছে। গিয়ে দেখে, মূর্তি কোথায়! বেদীর উপর দিয়ে পথ হয়ে গেছে। লোকের পরে লোক চলে, বিশ্রাম নেই।