পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিকা »@ ዓ “এইখানে যাকে বসিয়ে রেখেছিলেম লে কোথায় ।” কে তার মনের মধ্যে বলে উঠল, “যারা চলেছে তাদেরই মধ্যে।’ এমন সময় ছোটো ছেলে এসে বললে, “আমাকে হাতে ধরে নিয়ে চলো ।” “কোথায় ।” ছেলে বললে, “মেলার মধ্যে তুমিও যাবে না ?” মেয়ে বললে, “হা, আমিও যাব।” যে বেদীর সামনে এসে সে বসে থাকত সেই বেদীর উপর হল তার পথ, আর মূর্তির মধ্যে যে ঢেকে গিয়েছিল সকল যাত্রীর মধ্যে তাকে পেলে । পরীর পরিচয় রাজপুত্রের বয়স কুড়ি পার হয়ে যায়, দেশবিদেশ থেকে বিবাহের সম্বন্ধ আসে । ঘটক বললে, “বাহনীকরজের মেয়ে রূপসী বটে, যেন সাদা গোলাপের পুষ্পবৃষ্টি ।” রাজপুত্র মুখ ফিরিয়ে থাকে, জবাব করে না । দূত এসে বললে, “গান্ধাররাজের মেয়ের অঙ্গে অঙ্গে লাবণ্য ফেটে পড়ছে, যেন প্রাক্ষালতায় আঙুরের গুচ্ছ ।” রাজপুত্র শিকারের ছলে বনে চলে যায়। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, ফিরে আসে না । দূত এসে বললে, “কাম্বোজের রাজকন্যাকে দেখে এলেম ; ভোরবেলাকার দিগন্তরেখাটির মতো বাকা চোখের পল্লব, শিশিরে স্নিগ্ধ, আলোতে উজ্জল ।” রাজপুত্র ভর্তৃহরির কাব্য পড়তে লাগল, পুথি থেকে চোখ তুলল না। রাজা বললে, “এর কারণ ? ডাকো দেখি মন্ত্রীর পুত্রকে ।” মন্ত্রীর পুত্র এল । রাজা বললে, “তুমি তো আমার ছেলের মিতা, সত্য করে বলো, বিবাহে তার মন নেই কেন ।” মন্ত্রীর পুত্র বললে, “মহারাজ, যখন থেকে তোমার ছেলে পরীস্থানের কাহিনী শুনেছে সেই অবধি তার কামনা, সে পরী বিয়ে করবে।” २ রাজার হুকুম হল, পরীস্থান কোথায় খবর চাট । বড়ো বড়ো পণ্ডিত ডাকা হল, যেখানে যত পুথি আছে তারা সব খুলে দেখলে । মাথা নেড়ে বললে, পুথির কোনো পাতায় পরীস্থানের কোনো ইশারা মেলে না।