পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>Qb" রবীন্দ্র-রচনাবলী তখন রাজসভায় সওদাগরদের ডাক পড়ল। তারা বললে, “সমুদ্র পার হয়ে কত দ্বীপেই ঘুরলেম— এলাদ্বীপে, মরীচদ্বীপে, লবঙ্গলতার দেশে। আমরা গিয়েছি মলয়ৰীপে চন্দন আনতে, মুগনভির সন্ধানে গিয়েছি কৈলাসে দেবদারুবনে। কোথাও পরীস্থানের কোনো ঠিকানা পাই নি।” রাজা বললে, “ডাকো মন্ত্রীর পুত্রকে।” মন্ত্রীর পুত্র এল। রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলে, “পরীস্থানের কাহিনী রাজপুত্র কার কাছে শুনেছে।” মন্ত্রীর পুত্র বললে, “সেই যে আছে নবীন পাগলা, বশি হাতে বনে বনে ঘুরে বেড়ায়, শিকার করতে গিয়ে রাজপুত্র তারই কাছে পরীস্থানের গল্প শোনে।” রাজা বললে, “আচ্ছা, ডাকে তাকে ৷” নবীন পাগলা এক মুঠো বনের ফুল ভেট দিয়ে রাজার সামনে দাড়াল। রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলে, “পরীস্থানের খবর তুমি কোথায় পেলে ।” সে বললে, “সেখানে তো আমার সদাই যাওয়া আসা ।” রাজা জিজ্ঞাসা করলে, “কোথায় সে জায়গা ।” পাগলা বললে, “তোমার রাজ্যের সীমানায় চিত্রগিরি পাহাড়ের তলে, কাম্যক সরোবরের ধারে ।” রাজ জিজ্ঞাসা করলে, “সেইখানে পরী দেখা যায় ?” পাগলা বললে, “দেখা যায়, কিন্তু চেনা যায় না । তারা ছদ্মবেশে থাকে । কখনো কখনো যখন চলে যায় পরিচয় দিয়ে যায়, আর ধরবার পথ থাকে না ।” রাজা জিজ্ঞাসা করলে, “তুমি তাদের চেন কী উপায়ে ।” পাগল বললে, “কথনে ব একটা স্বর শুনে, কখনো বা একটা মালো দেপে ।” রাজা বিরক্ত হয়ে বললে, “এর আগাগোড়া সমস্তই পাগলামি, একে তাড়িয়ে দা ও * WS) পাগলার কথা রাজপুত্রের মনে গিয়ে বাজল । ফাল্গুনমাসে তখন ডালে ডালে শালস্কুলে ঠেলাঠেলি, আর শিরীষফুলে বনের প্রান্ত শিউরে উঠেছে। রাজপুত্র চিত্রগিরিতে এক চলে গেল । সবাই জিজ্ঞাসা করলে, “কোথায় যাচ্ছ।” সে কোনো জবাব করলে না ।