পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিকা $4వ গুহার ভিতর দিয়ে একটি ঝরনা ঝরে আসে, সেটি গিয়ে মিলেছে কাম্যকসরোবরে ; গ্রামের লোক তাকে বলে উদাসঝোরা । সেই ঝরনাতলায় একটি পোড়ো মন্দিরে রাজপুত্র বাসা নিলে । এক মাস কেটে গেল । গাছে গাছে যে কচিপাতা উঠেছিল তাদের রঙ ঘন হয়ে আসে, আর ঝরাফুলে বনপথ ছেয়ে যায়। এমন সময় একদিন ভোরের স্বপ্নে রাজপুত্রের কানে একটি বাশির স্বর এল । জেগে উঠেই রাজপুত্র বললে, “আজ পাব দেখা ।” 8 তখনি ঘোড়ায় চড়ে ঝরনাধারার তীর বেয়ে চলল, পৌছল কাম্যকসরোবরের ধারে । দেখে, সেখানে পাহাড়েদের এক মেয়ে পদ্মবনের ধারে বলে আছে। ঘড়ায় তার জল ভরা, কিন্তু ঘাটের থেকে সে ওঠে না। কালো মেয়ে কানের উপর কালে চুলে একটি শিরীষফুল পরেছে, গোধূলিতে যেন প্রথম তারা । রাজপুত্র ঘোড়া থেকে নেমে তাকে বললে, “তোমার ঐ কনের শিরীষফুলটি আমাকে দেবে ?” যে হরিণী ভয় জানে না এ বুঝি সেই হরিণী। ঘাড় বেকিয়ে একবার সে রাজপুত্রের মুখের দিকে চেয়ে দেখলে । তখন তার কালো চোখের উপর একটা কিসের ছায়া আরও ঘন কালো হয়ে নেমে এল– ঘুমের উপর যেন স্বপ্ন, দিগন্তে যেন প্রথম শ্রাবণের সঞ্চার । মেয়েটি কান থেকে ফুল খসিয়ে রাজপুত্রের হাতে দিয়ে বললে, “এই নাও।” রাজপুত্র তাকে জিজ্ঞাসা করলে, “তুমি কোন পরী আমাকে সত্য করে বলে ।” শুনে একবার মুখে দেখা দিল বিস্ময়, তার পরেই আশ্বিনমেঘের আচমকা বৃষ্টির মতো তার হাসির উপর হাসি, লে আর থামতে চায় না । রাজপুত্র মনে ভাবল, “স্বপ্ন বুঝি ফলল— এই হাসির স্বর যেন সেই বাশির স্বরের সঙ্গে মেলে ।” রাজপুত্র ঘোড়ায় চড়ে দুই হাত বাড়িয়ে দিলে ; বললে, “এলো ।” সে তার হাত ধরে ঘোড়ায় উঠে পড়ল, একটুও ভাবল না । তার জলভরা ঘড়া ঘাটে রইল পড়ে। শিরীষের ভাল থেকে কোকিল ডেকে উঠল, ফুছ কুছ কুছ কুছ । রাজপুত্র মেয়েটিকে কানে কানে জিজ্ঞাসা করলে, “তোমার নাম কী।” লে বললে, “আমার নাম কাজরী।" २९**>> so