পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ა©თ রবীন্দ্র-রচনাবলী উদাসঝোরার ধারে দুজনে গেল সেই পোড়ো মন্দিরে। রাজপুত্র বললে, "এবার তোমার ছদ্মবেশ ফেলে দাও।” সে বললে, “আমরা বনের মেয়ে, আমরা তো ছদ্মবেশ জানি নে ৷” রাজপুত্র বললে, “আমি যে তোমার পরীর মূর্তি দেখতে চাই।” পরীর মূর্তি ! আবার সেই হাসি, হাসির উপর হাসি। রাজপুত্র ভাবলে, “এর হাসির স্বর এই ঝরনার স্বরের সঙ্গে মেলে, এ আমার এই ঝরনার পরী।” (t রাজার কানে খবর গেল, রাজপুত্রের সঙ্গে পরীর বিয়ে হয়েছে। রাজবাড়ি থেকে ঘোড়া এল, হাতি এল, চতুৰ্দোলা এল । কাজরী জিজ্ঞাসা করলে, “এসব কেন !” রাজপুত্র বললে, “তোমাকে রাজবাড়িতে যেতে হবে।” তখন তার চোখ ছলছলিয়ে এল। মনে পড়ে গেল, তার ঘড়া পড়ে আছে সেই জলের ধারে ; মনে পড়ে গেল, তার ঘরের আঙিনায় শুকোবার জন্যে ঘাসের বীজ মেলে দিয়ে এসেছে ; মনে পড়ল, তার বাপ আর ভাই শিকারে চলে গিয়েছিল, তাদের ফেরবার সময় হয়েছে ; আর মনে পড়ল, তার বিয়েতে একদিন যৌতুক দেবে ব’লে তার মা গাছতলায় তাত পেতে কাপড় বুনছে, আর গুনগুন করে গান গাইছে। সে বললে, "না, আমি যাব না।” কিন্তু ঢাক ঢোল বেজে উঠল ; বাজল বঁশি, কঁাসি, দামামা— ওর কথা শোনা গেল না । 曾 চতুৰ্দোল থেকে কাজরী যখন রাজবাড়িতে নামল, রাজমহিষী কপাল চাপড়ে বললে, “এ কেমনতরো পরী।” রাজার মেয়ে বললে, “ছি, ছি, কী লজ ।” মহিষীর দাসী বললে, “পরীর বেশটাই বা কী রকম।” রাজপুত্র বললে, "চুপ করো, তোমাদের ঘরে পর ছদ্মবেশে এসেছে।” وني) দিনের পর দিন যায়। রাজপুত্র জ্যোৎস্নারাত্রে বিছানায় জেগে উঠে চেয়ে দেখে, কাজরীর ছদ্মবেশ একটু কোথাও খসে পড়েছে কিনা । দেখে যে, কালো মেয়ের কালে চুল এলিয়ে গেছে, আর তার দেহখানি যেন কালো পাথরে নিখুঁত করে খোদা একটি