পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৪ রবীন্দ্র-রচনাবলী আমি বললেম, “সেইটি আমার মন । তার মধ্যে যা ধরা পড়ছে তাই নানা স্বষ্টি হয়ে উঠছে।” Lä . গাছ বললে, “তোমার সেই বেড়াঘের স্বাক্টটা আমাদের চন্দ্রস্বর্ষের পাশে কতটুকুই বা দেখায় ।” আমি বললেম, ‘চন্দ্রস্থৰ্যকে দিয়ে তাকে তো মাপা যায় না, চন্দ্রস্বর্য যে বাইরের জিনিস ।” “তা হলে মাপবে কী দিয়ে ।”

  • মুখ দিয়ে, বিশেষত দুঃখ দিয়ে।”

গাছ বললে, “এই পুবে হাওয়া আমার কানে কানে কথা কয়, আমার প্রাণে প্ৰাণে তার সাড়া জাগে । কিন্তু, তুমি যে কিসের কথা বললে আমি কিছুই বুঝলেম না।” আমি বললেম, “বোঝাই কী করে । তোমার ঐ পুবে হাওয়াকে আমাদের বেড়ার মধ্যে ধ’রে বীণার তারে যেমনি বেঁধে ফেলেছি, অমনি সেই হাওয়া এক স্বষ্টি থেকে একেবারে আর-এক স্বষ্টিতে এসে পৌছয়। এই স্বষ্টি কোন আকাশে যে স্থান পায়, কোন বিরাট চিত্তের স্মরণাকাশে, তা আমিও ঠিক জানি নে। মনে হয়, যেন বেদনার একটা আকাশ আছে । সে আকাশ মাপের আকাশ নয় ।”

  • আর, ওর কাল ?”
  • ওর কালও ঘটনার কাল নয়, বেদনার কাল । তাই সে কাল সংপ্যার অতীত।"

"দুই আকাশ দুই কালের জীব তুমি, তুমি অদ্ভূত। তোমার ভিতরের কথা কিছুই বুঝলেম না ।” “নাই বা বুঝলে !" “আমার বাইরের কথা তুমিই কি ঠিক বোঝ।” “তোমার বাইরের কথা আমার ভিতরে এসে যে কথা হয়ে ওঠে তাকে যদি বোঝা বল তো সে বোঝা, যদি গান বল তো গান, কল্পনা বল তো কল্পনা ।” VL গাছ তার সমস্ত ডালগুলো তুলে আমাকে বললে, “একটু থামো। তুমি বড়ো বেশি ভাব’, আর বড়ো বেশি বক’ ।” শুনে আমার মনে হল, এ কথা সত্যি। আমি বললেম, "চুপ করবার জন্তেই তোমার কাছে আসি, কিন্তু অভ্যাসদোষে চুপ ক'রে করেও বকি ; কেউ কেউ যেমন ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও চলে।”