পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিক ›ዓo ইন্দ্র । অনুষ্ঠান ও সমারোহ বেড়ে উঠেছে, দিনশেষে স্বর্যাস্তের সমারোহের মতো, তার পশ্চাতে অন্ধকার । তুমি তো জান দেবসেনাপতি, স্বর্গ এত মিথ্যা হয়েছে যে, সকলপ্রকার বিপদের ভয় পর্যন্ত তার চলে গেছে । দৈত্যেরা যে কত যুগযুগান্তর তাকে আক্রমণ করে নি তা মনে পড়ে না। আক্রমণ করবার যে কিছুই নেই। মাঝে মাঝে স্বর্গের যখন পরাভব হ’ত তখনও স্বৰ্গ ছিল, কিন্তু যখন থেকে— কার্তিকেয়। আপনার কথা যেন কিছু কিছু বুঝতে পারছি । বৃহস্পতি । স্বপ্ন থেকে জাগবা মাত্রই যেমন বোঝা যায়, স্বপ্ন দেখছিলুম, ইন্দ্রের কথা শুনেই তেমনি মনে হচ্ছে, একটা যেন মায়ার মধ্যে ছিলুম, কিন্তু তবু এখনও সম্পূর্ণ ঘোর ভাঙে নি। কার্তিকেয়। আমার কী রকম বোধ হচ্ছে বলব ? তুণের মধ্যে শর আছে, সেই শরের ভার বহন করছি, সেই শরের দিকেই মন বদ্ধ আছে, ভাবছি সমস্তই ঠিক আছে । এমন সময়ে কে যেন বললে, একবার তোমার চার দিকে তাকিয়ে দেখো । চেয়ে দেখি, শর আছে কিন্তু লক্ষ্য করবার কিছুই নেই। স্বর্গের লক্ষ্য চলে গেছে । বৃহস্পতি । কেন এমন হল তার কারণ তো জানা চাই । ইন্দ্র । যে মাটির থেকে রস টেনে স্বৰ্গ আপনার ফুল ফুটিয়েছিল সেই মাটির সঙ্গে তার সম্বন্ধ ছিন্ন হয়ে গেছে । বুহম্পতি । মাটি আপনি কাকে বলছেন । ইন্দ্র । পৃথিবীকে । মনে তো আছে, একদিন মানুষ স্বর্গে এসে দেবতার কাজে যোগ দিয়েছে এবং দেবতা পৃথিবীতে নেমে মানুষের যুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে। তখন স্বর্গ মর্ত উভয়েই সত্য হয়ে উঠেছিল, তাই সেই যুগকে সত্যযুগ বলত। সেই পৃথিবীর সঙ্গে যোগ না থাকলে স্বৰ্গ আপনার অযুতে আপনি কি বাচতে পারে। কার্তিকেয়। আর, পৃথিবীও যে যায়, দেবরাজ । মানুষ এমনি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে যাচ্ছে যে, সে আপনার শৌর্ধকে আর বিশ্বাস করে না, কেবল বস্তুর উপরেই তার ভরসা। বস্তু নিয়ে মারামারি কাটাকাটি পড়ে গেছে। স্বর্গের টান ষে ছিন্ন হয়েছে, তাই আত্মা বস্তু ভেদ করে আলোকের দিকে উঠতে পারছে না। বৃহস্পতি । এখন উদ্ধারের উপায় কী । ইন্দ্র । পৃথিবীর সঙ্গে স্বর্গের আবার যোগসাধন করতে হবে। বৃহস্পতি । কিন্তু, দেবতারা যে পথ দিয়ে পৃথিবীতে যেতেন, অনেক দিন হল, লে পথের চিহ্ন লোপ হয়ে গেছে। আমি মনে করেছিলুম, ভালোই হয়েছে। ভেবেছিলুম, এইবার প্রমাণ হয়ে বাবে, স্বৰ্গ নিরপেক্ষ, নিরবলম্ব, আপনাতেই আপনি সম্পূর্ণ।