পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে ఎగీ সভোরা সকলে বলে উঠল, অহো, পশুর এ কী মুক্তি ! লেজবন্ধনের মায়া ওর এত দিনে কেটে গেল ! ধন্ত ! শিবুরাম একটা গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ফেললে । চোখের জল সামলিয়ে নিয়ে সেও অতি করুণস্বরে বললে, ধন্ত ! সেদিন ওর আহারে রুচি রইল না, সমস্ত রাত সেই কাটা লেজের স্বপ্ন দেখলে । পরদিন শিবুরাম সভায় এসে হাজির। গোসাইজি বললেন, কেমন হে শিবু, দেহটা হাস্কা বোধ হচ্ছে তো ? শিবুরাম বললে, আঙ্গে, খুবই হাল্কা । কিন্তু মন বলছে, লেজ গেল তবু মানুষের সঙ্গে বর্ণভেদ তো ঘুচল না। গোসাই বললেন, রঙ মিলিয়ে সবর্ণ হতে চাও যদি, তবে রোয় ঘুচিয়ে ফেলো । তিতু নাপিত এল । পাচ দিন লাগল খুর বুলিয়ে বুলিয়ে লোমগুলো চেচে ফেলতে। রূপ যেটা ফুটে উঠল তা দেখে সভার সবাই চুপ করে গেল। শিবুরাম উদবিগ্ন হয়ে বললে, মশায়, আপনারা কোনো কথা বলেন না কেন। সভ্যরা বললে, আমরা নিজের কীর্তিতে অবাক । শিবুরাম মনে শাস্তি পেল। কাটা লেজ ও টাচ রোয়ার শোক ভুলে গেল। সভ্যরা দুই চক্ষু বুজে বললেন, শিবুরাম, আর নয়। সভা বন্ধ হল। এখন— শিবু বললে, এখন আমার কাজ হবে শেয়াল-সমাজকে অবাক করা। এ দিকে শিবুরামের পিসি খেকিনি কেঁদে কেঁদে মরে। গায়ের মোড়ল হকুইকে গিয়ে বললে, মোড়ল মশায়, আজ এক বছরের উপর হয়ে গেল আমার হোঁহোঁকে দেখি নে কেন । বাঘ-ভাল্লুকের হাতে পড়ল না.তো ? মোড়ল বললে, বাঘ-ভালুককে ভয় কিসের ? ভয় ঐ মানুষ জানোয়ারটাকে, হয়তো তাদের ফাদে পড়েছে। খোজ পড়ে গেল। ঘুরতে ঘুরতে ভলণ্টিয়ারের দল এল সেই চণ্ডীমণ্ডপের বাশবনে। ডাক দিলে, হুঙ্কা হুয়া । শিবুরামের বুকের মধ্যে ধড়ফড়, করে উঠল, একবার গলা ছেড়ে ঐ একতানমস্ত্রে যোগ দিতে ইচ্ছা হল । বহু কষ্টে চেপে গেল । দ্বিতীয় প্রহরে বাশবনে আবার ডাক উঠল, ছৱা হয়। এবার শিবুরামের চাপা গলায় কারার মতো একটুখানি রব উঠল। তৰু থেমে গেল । তৃতীয় প্রহরে ওরা আবার যখন ডাক ছাড়লে শিবুরাম আর থাকতে পারলে না ;