পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

こ> ● রবীন্দ্র-রচনাবলী জঙ্গলের মধ্য দিয়ে চলেছি, ঘোর অন্ধকার । পুকুরের ধারে আসলেওড়ার ঝোপ । হঠাৎ তার ভিতর থেকে খেকশিয়ালি উঠল ডেকে । তখন রাত সাড়ে তিনটে হবে। যেমনি ডাক, পুত্তলাল চমকে উঠে গাড়িমৃদ্ধ গিয়ে পড়ল একগলা জলের মধ্যে। এ দিকে তার পিঠের কাপড়ের ভিতরে একটা ব্যাঙ ঢুকে লাফালাফি করছে। আর, পুৰুলালের সে কী চেচনি ! আমি ওকে সানা দিয়ে বললুম, পুত্ত লাল, তোর পিঠে বাত আছে, ব্যাঙটাকে খুব কষে লাফাতে দে, বিনি পয়সায় অমন ভালো মালিশ আর পাবি নে । গাড়ির ছাদের উপর দাড়িয়ে ডাক দিতে লাগলুম, বনমালী, বনমালী । ইস্ট পিডের কোনো সাড়াশন্ধ নেই। স্পষ্টই বোঝা গেল, সে তখন বোলপুর স্টেশনের প্ল্যাটফরমে চাদর মুড়ি দিয়ে নাক ডাকিয়ে ঘুমচ্ছে। ভারি রাগ হল । ইচ্ছে করল, তার নাকের মধ্যে ফাউণ্টেন পেনের স্বভুমুড়ি দিয়ে তাকে হাচিয়ে দিয়ে আসি গে। এ দিকে পাকের জলে আমার চুলগুলো গেছে ভিজে । না আঁচড়ে নিয়ে ওর বৌদিদির ওখানে যাই কী ক’রে । গোলমাল শুনে পুকুরপাড়ে হাসগুলো প্যাক প্যাক ক’রে ডেকে উঠেছে। এক লাফ দিয়ে পড়লুম তাদের মধ্যে ; একটাকে চেপে ধরে তার ডানা দিয়ে ঘষে ঘষে চুলটা একরকম ঠিক করে নিলুম। পুত্ত লাল বললে, ঠিক বলেছ, দাদাবাৰু। ব্যাঙের লাফে বড়ো আরাম বোধ হচ্ছে। ঘুম আসছে। যাওয়া গেল ওর বৌদিদির বাড়িতে। খিদের চোটে একেবারে ভুলে গেছি কনে দেখার কথা । বৌদিদিকে জিগেল করলেম, আমার সঙ্গে ছিল সে, তাকে দেখছি নে কেন । তিন হাত দোপাট্টা কাপড়ের ঘোমটার ভিতর থেকে মিহিম্বরে বৌদিদি বললে, সে কনে খুঁজতে গেছে। কোন চুলোয়। মজা দিঘির ধারে বঁাশতলায় । কত দূর হবে। তিন পহরের পথ । দূর বেশি নয় বটে। কিন্তু, খিদে পেয়েছে। তোমার সেই চাটুনি বের করে দিকি । বৌদিদি নাকি স্বরে বললে, হায় রে আমার পোড়া কপাল, এই গেল মঙ্গলবারের আগের মঙ্গলবারে ফাটা ফুটবল ভর্তি ক’রে সমস্তটা পাঠিয়ে দিয়েছি বুজদিদির ওখানে— সে ওটা খেতে ভালোবালে ছোলার ছাতুর সঙ্গে শর্ধেতেল আর লক্ষ দিয়ে মেখে ।