পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8० রবীন্দ্র-রচনাবলী ভিতরে যেমন ক’রে পাট ঠেসে গুজতে হয়। সে স্থাপিয়ে উঠে ভাঙা গলায় ব’লে উঠল, কে তুমি বাবা, ভিতরে জায়গা হবে না । 蠟 তখন তার গলাটা পেয়েছি দখলে ; বললুম, তোমার হবে না জায়গা, আমার হবে। বেরোও তুমি । 蟲 লে গো গে করতে করতে বললে, অনেকখানি বেরিয়েছি, একটু বাকি । ঠেলা মারো । {o দিলুম ঠেলা, হস্ ক’রে গেল বেরিয়ে । এ দিকে পাতুগুড়োর গিরি এসে বললে, বলি, ও পোড়ারমুখে । কান জুড়িয়ে গেল। বললুম, বলো বলে, আবার বলে, বড়ো মিষ্টি লাগছে, এমন ডাক ষে আবার কোনোদিন শুনতে পাব এমন আশাই ছিল না । বুড়ি ভাবলে ঠাট্টা করছি, কাটা আনতে গেল ঘরের মধ্যে । ভয় হল, পড়ে-পাওয়া দেহটা খোয়াই বুঝি। বাসায় এসে আয়নাতে মুখ দেখলুম, সমস্ত শরীর উঠল শিউরে। ইচ্ছে করল র্যাদা দিয়ে মুখটাকে ছুলে নিই। গা-হারার গা এল, কিন্তু চেহারা-হারার চেহারাখানা সাত বাও জলের তলায়, তাকে ফিরে পাবার কী উপায় । ঠিক এই সময়ে দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর খিদেটাকে পাওয়া গেল । একেবারে জঠর জুড়ে । সব ক’টা নাড়ী চো চো করে উঠেছে এক সঙ্গে । চোখে দেখতে পাই নে পেটের জালায় । যাকে পাই তাকে খাই গোছের অবস্থা । উঃ, কী আনন্দ । মনে পড়ল, তোমার ঘরে পুপুদিদির নেমস্তন্ন। রেলভাড়ার পয়সা নেই। হেঁটে চলতে শুরু করলুম। চলার অসম্ভব মেহরতে কী যে আরাম সে আর কী বলব। ফুর্তিতে একেবারে গলদঘর্ম। এক এক পা ফেলছি আর মনে মনে বলছি, খামছি নে, থামছি নে, চলছি তো চলছিই । এমন বেদম চলা জীবনে কখনো হয় নি। দাদা, পুরো একখানা গা নিয়ে বসে আছ কেদারায়, বুঝতেই পার না কষ্টতে যে কী মজা। এই কষ্টে বুঝতে পারা যায়, আছি বটে, খুব কষে আছি, বোলো আনা পেরিয়ে গিয়ে | আমি বললুম, সব বুঝলুম, এখন কী করতে চাও বলে । করবার দায় তোমারই, নেমস্তন্ন করেছিলে, খাওয়াতে হবে, সে কথা ভুললে চলবে না । রাত এখন তিনটে সে কথা তুমিও ভুললে চলবে না। তা হলে চললুম পুপুদিদির কাছে।