পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ર8ના রবীন্দ্র-রচনাবলী পথ ভুল হয়ে গিয়েছিল। কী করে। অমরাবতীর যে স্বরধুনীনদীর এক পারে ইন্দ্রলোক, তারই ভাটিতে আছে আরএক স্বর্গ। কারখানাঘরের কালো ধোয়ার পতাকা উড়ছে সেখানকার আকাশে । সেটা হল কাজের স্বর্গ। সেখানে হাফ প্যাণ্ট-পরা দেবতা বিশ্বকৰ্ম । একদিন শরৎকালের সকালে পুজোর থালায় শিউলিফুল সাজিয়ে রাস্তায় চলেছি ; ঘাড়ের উপর এসে পড়ল বাইক-চড়া এক পাণ্ডা। তার ঝুলিতে একতাড়া খাতা ; বুকের পকেটে একটা লাল কালীর, একটা কালো কালীর ফাউন্টেন্‌পেন। খবরের কাগজের কাটা টুকরোর বাণ্ডিল চায়না-কোটের দুই পকেট ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়েছে ; ডান হাতের কজিঘড়িতে স্ট্যাণ্ডার্ড, টাইম, বা হাতে কলকাতা টাইম ; ব্যাগে ই. আই. আর., ই. বি. আর. এ. বি. আর. এন. ডব্লু. আর. বি. এন. আর. বি. বি. আর. এস. আই. আর. এর টাইমটেবিল। বুকের পকেটে নোটবই ডায়রি-মৃদ্ধ। ধাক্কা খেয়ে মুখ থুবড়িয়ে পড়ি আরকি । সে বললে, আকাশের দিকে তাকিয়ে চলেছ কোন চুলোয়। আমি বললুম, রাগ কোরো না, পাণ্ডাজি। মন্দিরে পুজো দিতে যাব, রাস্তা খুজে পাচ্ছি নে । সে বললে, তোমরা বুঝি মেঘের-দিকে-ই-ক’রে-তাকানো রাস্তা-খোজার দল ! চলো, পথ দেখিয়ে দিচ্ছি। আমাকে হিড়হিড়, করে টেনে নিয়ে এল বিশ্বকর্মঠাকুরের মন্দিরে । হা-না করবার সময় দিলে না। কিছু জিগেল করবার আগেই বললে, রাখো এইখানে থালা, পকেট থেকে বের করো পাচ-সিকে দক্ষিণে । বোকার মতো পুজো দিলেম। তখনই হিসেব সে টুকে নিলে তার নোটবইয়ে। কজিঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললে, হয়েছে কাজ, এখন বেরোও । সময় নেই। পরদিন থেকেই দেখি ফল ফলেছে। ভোর তখন সাড়ে চারটে । ডাকাত পড়েছে ভেবে ধড়ফড় ক’রে ঘুম ভেঙে শুনি, অনাথতারিণী সভার সভ্যেরা বারো-তেরো বছরের পচিশটা ছেলে জুটিয়ে দরজায় এলে চীৎকারস্বরে গান জুড়ে দিয়েছে— যত পেটে ধরে তার চেয়ে ভর পেটে, টাকপিয়সায় পকেট পড়ছে ফেটে— হিসেব খতিয়ে দেখলে বুঝতে পার' অনাথজনের কত ধার তুমি ধার’।