পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ર૭૦ রবীন্দ্র-রচনাবলী বাড়ির ছাদে । আমি বললুম, ব্যাপার কী । ঝাকানি দিয়ে মাথাটা উপরে তুলে বললে, আমি রাজপুকুর। তলোয়ার কোথায় । দেয়ালির রাত্রে ওদের ছাদে আধপোড়া তুবড়িবাজির একটা কাঠি পড়েছিল, কোমরে সেইটেকে ফিতে দিয়ে বেঁধেছে ! আমাকে দেখিয়ে দিলে । আমি বললুম, তলোয়ার বটে। কিন্তু, ঘোড়া চাই তো ? বললে, আস্তাবলে আছে । ব'লে ছাদের কোণ থেকে ওর জ্যাঠামশায়ের বহুকেলে বেহায়া একটা ছেড়া ছাত। টেনে নিয়ে এল। দুই পায়ের মধ্যে তাকে চেপে ধরে হাটুহাট আ ওয়াজ করতে করতে ছাদময় একবার দৌড় করিয়ে আনলে । আমি বললুম, ঘোড়া বটে ! এর পক্ষীরাজের চেহারা দেখতে চাও ? চাই বই-কি । ছাতাট ফস্ করে খুলে দিলে । ছাতার পেটের মধ্যে ঘোড়ার থাবার দান ছিল, সেগুলো ছড়িয়ে পড়ল ছাদে । আমি বললুম, আশ্চর্য ! কী আশ্চর্য ! এ জন্মে পক্ষীরাজ দেখব, কোনোনি এমন আশাই করি নি । এইবার আমি উড়ছি, দাদা । চোপ বুজে থাকে, তা হলে বুঝতে পারবে, আমি ঐ মেঘের কাছে গিয়ে ঠেকেছি। একেবারে অন্ধকার ! চোখ বোজবার দরকার করে না আমার । স্পষ্টষ্ট জানতে পারছি, তুমি খুব উড়ছ, পক্ষীরাজের ডান মেদের মধ্যে হারিয়ে গেছে । আচ্ছ, দাদামশায়, আমার ঘোড়াটার একটা নাম দিয়ে দণ ৪ তে । আমি বললুম, ছত্রপতি । নামটা পছন্দ হল । রাজপুকুর ছাতার পিঠ চাপড়িয়ে বললে, ছত্রপতি ! নিজেই ঘোড়ার হয়ে তার জবাব দিলে, অজ্ঞে ! আমার মুখের দিকে চেয়ে বললে, তুমি ভাবছ, আমি বললুম । আঞ্জে, তা নয়, ঘোড় বললে । সে কথাও কি আমাকে বলতে হবে । আমি কি এত কাল । রাজপুকুর বললে, ছত্রপতি, আর ভালে লাগছে ন চুপচাপ পড়ে থাকতে । তারই মুপ থেকে উত্তর পাওয়া গেল, কী হুকুম বলে । তেপান্তরের মাঠ পেরোনো চাই ।