পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*ఎ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী রাস্তা বেয়ে গেল চলে ডাক্তারের গাড়ি তার ঘরে ফিরে । সেদিন আমার সমস্ত-মন-ভরা একটি রাত্রির রূপ দেখেছি ; আমি তাতে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিলুম, পৃথিবী যেমন তার স্বাতন্ত্র্য মিলিয়ে দেয় নিশীথের ধ্যানাবরণে । কী জানি মুকুমারের কী মনে হল ; সে অধীর হয়ে বলে উঠল, আমাকে কিন্তু তোমার ঐ দিদি অন্ধকারের ভিতর দিয়ে আমন চুপিচুপি নিয়ে যাবে না । পুজোর ছুটির দিনে ষেদিন সকালে দশটা বাজবে, কাউকে ইস্কুলে যেতে হবে না, ছেলেরা সবাই যেদিন গেছে রথতলার মাঠে ব্যাটবল খেলতে, সেইদিন আমি খেলার মতো করেই হঠাং মিলিয়ে যাব আকাশে ছুটির দিনের রোদঘুরে । শুনে আমি চুপ করে রইলুম ; কিছু বললুম না। পুপেদিদি বললে, কাল থেকে স্বকুমারদা'র কথা তুমি প্রায়ই বলছ । তার মধ্যে আমার উপরে একটুখানি খোচ থাকে । তুমি কি মনে কর তোমার ভালোবাসার অংশ নিয়ে স্বকুমারদা'র সঙ্গে আমার ছেলেবেলাকার যে ঝগড়া ছিল সেটা এখনও আছে । হয়তো একটুখানি আছে বা । সেইটেকে একেবারে ক্ষইয়ে দেব বলুেই বারবার তার কথা তুলি । আরও একটুখানি কারণ আছে। কী কারণ বলোই-না ! কিছুদিন আগে মুকুমারের বাবা ডাক্তার নিতাই এসেছিলেন আমার কাছে বিদায় নিতে । কেন, বিদায় নিতে কেন । তোমাকে বলব মনে করেছিলুম, বলা হয় নি। আজ বলি। নিতাই চাইলে স্বকুমার আইন পড়ে, হুকুমার চাইলে সে ছবি আঁকা শেখে নন্দলালবাবুর কাছে। নিতাই বললে, ছবি আঁকা বিদ্যেয় আঙুল চলে, পেট চলে না। স্বকুমার বললে, আমার ছবির খিদে যত পেটের খিদে তত বেশি নয়। নিতাই কিছু কড়া করে বললে, সে কথাটা তোমার প্রমাণ ক’রে দেবার দরকার হয় নি, পেট সহজেই চলে যাচ্ছে। কথাটা বিত্র লাগল তার মনে, কিন্তু হেসে বললে, কথাটা সত্যি— এর প্রমাণ দেওয়া উচিত। *