পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পসল্প \లల) শুক্রবারে রাত্রির এক প্রহর থাকতে। আবার শুকুর বারটা অগ্রহায়ণের উনিশে তারিখে না হলে চলবে না। ভেবে দেখো বাবা, এতে ফাকি কিছুই নেই। দিনখন তারিখ সমস্ত পাক ক’রে বেঁধে দেওয়া । আমরা ভাবলুম, কথাটা শোনাচ্ছে অত্যন্ত বেশি খাটি। বুড়ে মালটাকে সন্ধান করতে লাগিয়ে দেব । এথনো সামান্ত কিছু বাকি আছে। ঐ শিলট তিব্বতের লামারা কালিম্পঙের হাটে বেচতে নিয়ে আসে ধবলেশ্বর পাহাড় থেকে । পঞ্চানন দাদা এ পার থেকে ও পার পর্যন্ত টাকে হাত বুলিয়ে বললেন, এটা কিছু শক্ত ঠেকছে। প্রোফেসার বললেন, শক্ত কিছুই নয়। সন্ধান করলেই পাওয়া যাবে। মনে মনে ভাবলুম, সন্ধান করাই চাই, ছাড়া হবে না— তার পরে শিল নিয়ে কী করতে হবে । রোসো, অল্প একটু বাকি আছে। একটা দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ চাই । পঞ্চানন দাদ বললেন, সে শঙ্খ পাওয়া তো সহজ নয় । যে পায় সে যে রাজা হয় । হা:, রাজা হয় না মাথা হয় | শঙ্খ জিনিসটা শঙ্খ । যাকে বাংলায় বলে শাখ । সেই শস্থটা আমড়ার অঁাঠি দিয়ে, শিলের উপর রেখে, ঘষতে হবে। ঘষতে ঘষতে স্বাঠির চিহ্ন থাকবে না, শম্ব যাবে ক্ষ'য়ে। আর, শিলটা যাবে কাদা হয়ে । এইবার এই পিণ্ডিটা নিয়ে দাও বুলিয়ে দেয়ালের গায় । বাস। একেই বলে দ্রব্যগুণ। দ্রব্যগুণেই দেয়ালটা দেয়াল হয়েছে। মস্তরে হয় নি। আর দ্রব্যগুণেই সেটা হয়ে যাবে ধোয়া, এতে আশ্চর্য কী । আমি বললুম, তাই তো, কথাটা খুব সত্যি শোনাচ্ছে। পঞ্চানন দাদা মাথায় হাত বোলাতে লাগলেন ব'সে ব’লে, বঁ হাতে হু কোট ধ’রে । আমাদের সন্ধানের ক্রটিতে এই সামান্ত কথাটার প্রমাণ ৮লষ্ট না । এতদিন পরে ইরুর মস্তর তন্তর রাজবাড়ি, মনে হল, সব বাজে । কিন্তু, অধ্যাপকের দ্রব্যগুণের মধ্যে কোনোখানেই তো ফাকি নেই। দেয়াল রইল নিরেট হয়ে । অধ্যাপকের পরে আমাদের ভক্তিও রইল অটল হয়ে । কিন্তু, একবার দৈবাং কী মনের ভুলে দ্রব্যগুণটাকে নাগালের মধ্যে এনে ফেলেছিলেন। বলেছিলেন, ফলের আঁঠি মাটিতে পুতে এক ঘণ্টার মধ্যেই গাছও পাওয়া যাবে, ফলও পাওয়া যাবে। আমরা বললুম, আশ্চর্ষ।