পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O8 o রবীন্দ্র-রচনাবলী ম্যানেজার তখনও দুধের স্বানের গুমোর হজম করে উঠতে পারেন নি। মিশিরকে হুকুম দিয়ে গুড়গুড়ি টানতে লাগলেন । ধান কাটার সময় এল । দিন নেই, রাত নেই, মিশির জসিমের খেতে পাহারা দেয় । একদিন ভরা খেতে অন্য পক্ষের লোক হল্লা ক’রে এল, মিশির বুক ফুলিয়ে বললে, বাবা-সকল, আমি থাকতে এ ধান তোমাদের ঘরে উঠবে না। সেলাম ঠুকে চলে যাও । মিশির যত বড়ে সদার হোক, সেদিন সে একল । যখন তাকে ঘেরাও করলে সে গুটিমুটি মেরে ব’সে সবাইকে আটকাতে লাগল । অপর পক্ষের লোক বললে, দাদা, পারবে না । কেন প্রাণ দেবে । মিশির বললে, নিমক খেয়েছি, প্রাণ যায় যাক ; নিমকের মান রাখতেই হবে । চলল দাঙ্গ— শুধু লাঠির মার হলে হয়তো মিশির ঠেকাতেও পারত। অপর পক্ষ শড়কি চালালো । একটা এসে বিধল মিশিরের পায়ে । অপর পক্ষ আবার তাকে সতর্ক করে বললে, আর কেন । এবার ক্ষাস্ত দে ভাই । মিশির বললে, মিশির সর্দার প্রাণের ভয় করে না, ভয় করে বেইমানির । শেষকালে একটা শড়কি এসে বিধল তার পেটে । এটা হল মরণের মার । পুলিশের হাতে পড়বার ভয়ে অপর পক্ষ পালাবার পথ দেখলে । মিশির শড়কি টেনে উপড়ে, পেটে চাদর জড়িয়ে ছুটল তাদের পিছন-পিছন । বেশি দূরে যেতে পারলে না । পড়ে গেল মাটিতে । পুলিশ এল । মিশির জমিদারকে বাচাবার জন্য, তার নামও করলে না । বললে, আমি জলিমের চাকরি নিয়ে তার ধান আগলাচ্ছিলুম। ম্যানেজার সব খবর পেলেন । গুড়গুড়ি লাগলেন টানতে । র্তার দুধের স্বানের খ্যাতি— এ তে যে-লে লোকের কর্ম নয় । কিন্তু, নিমক খেয়েছে যপন তখন প্রাণ দেওয়া— এটা এতই কী আশ্চর্ষ । এমন তো ঘটেই থাকে । কিন্তু, দুধে স্নান !