পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পসল্প «Oßዓ জানে, দুর্দশার কথা শুনল আমার কাছে। বললে, এক কাজ করো বাপু, বোড়োগ্রামে বিখ্যাত গণংকার মধুসূদন জ্যোতিষী কুষ্টি দেখে তোমার ভিটের খবর দিতে পারবেন । কোথা থেকে তিনি খবর পেয়েছেন আমার হাতে কিছু মাল আছে। খুব ক্ষতি করে গণনায় বসে গেলেন। অনেক অঁাকর্জোক কেটে শেষকালে বললেন, আপনার ঘরের সঙ্গে রাস্তার ঘোরতর মন-কষাকষি হয়ে গেছে ; একেবারে মুর্গ-দেখাদেখি বন্ধ ; ভিটে রেগে দৌড় মেরেছে মাসির বাড়িতে । ব্যস্ত হয়ে বললেম, মালির বাড়িটা কোথায় । শুনে বিশ্বাস করবেন না, একেবারে সাত হাত মাটির নীচে । ঐখানে মাতুল হয়েছিল, ঐখানেই মুখ লুকিয়েছে। তা হলে এখন উপায় ? আছে উপায় । আপনি যান কলকাতায় ফিরে, উপযুক্ত-মতে কিছু টাকা রেখে যান। ঠিক সাড়ে সাত মাস পরে ফিরে আসবেন । মালিকে খুশি করে আপনার পৈতৃক বাড়ি ফিরিয়ে আনব । কিন্তু, কিছু দক্ষিণা লাগবে । আমি বললেম, তা যত লাগে লাগুক, আপনি ভাববেন না। পৈতৃক ভিটে আমার চাই । আশ্চর্য জ্যোতিষীর বাহাদুরি । সাড়ে সাত মাস পরে ফিরে এসে ভোজুঘাটার থেকে মেপে ঠিক সাড়ে সাত ক্রোশ পেরুলুম। যেখানে কিছু ছিল না সেখানে বাসাটা উঠেছে মাথা তুলে । আমি বললুম, কিন্তু গণকঠাকুর, বাসাটা যে ঠেকছে একেবারে চাছাপোছা নতুন ? গণকঠাকুর বললেন, হবে না ? মাসির বাড়িতে খেয়েদেয়ে একেবারে চিকচিকিয়ে উঠেছে ! আপনার হাসাহালি করছেন, কিন্তু এ একেবারে আমার স্বচক্ষে দেখা । আমকাঠের দরজাজানালা আর তালকাঠের কড়িবরগা । আমার কলেক্তি বন্ধুর কথাটাকে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। আমার বালুকভাঙার বিখ্যাত পণ্ডিত হাজারীপ্রসাদ দ্বিবেদীকে ডাকিয়ে আনলুম বিধান দিতে । তিনি বললেন, সংসারে সকলের চেয়ে বড়ো বিপদ হচ্ছে পথের সঙ্গে ঘরের আড়াআড়ি নিয়ে । এর বেশি আর একটিও কথা বলতে চাইলেন না। আমি কলকাতার বন্ধুদের ঠেল! দিয়ে বললুম, কেমন !