পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পসল্প ** Ꮼ© Ꮼ ধংস দিদি, তোমাকে একটা হালের খবর বলি — প্যারিস শহরের অল্প একটু দূরে ছিল তার ছোটো বালাটি। বাড়ির কর্তার নাম পিয়ের শোপ্যা। র্তার সারা জীবনের শখ ছিল গাছপালার জোড় মিলিয়ে, রেণু মিলিয়ে, তাদের চেহারা, তাদের রঙ, তাদের স্বাদ বদল ক’রে নতুম রকমের স্মৃষ্টি তৈরি করতে । তাতে কম সময় লাগত না । এক-একটি ফুলের ফলের স্বভাব বদলাতে বছরের পর বছর কেটে যেত। এ কাজে যেমন ছিল তার আনন্দ তেমনি ছিল তার ধৈর্য । বাগান নিয়ে তিনি যেন জাদু করতেন । লাল হত নীল, সাদা হত আলতার রঙ, মাটি যেত উড়ে, খোষা যেত থ’লে । যেটা ফলতে লাগে ছ মাস তার মেয়াদ কমে হুত দু মাস । ছিলেন গরিব, ব্যাবসাতে সুবিধা করতে পারতেন না । যে করত তার হাতের কাজের তারিফ তাকে দামি মাল অমনি দিতেন বিলিয়ে । যার মতলব ছিল দাম ফাকি দিতে সে এসে বলত, কী ফুল ফুটেছে আপনার সেই গাছটাতে, চার দিক থেকে লোক আসছে দেখতে, একেবারে তাক লেগে যাচ্ছে । তিনি দাম চাইতে ভুলে যেতেন । তার জীবনের খুব বড়ো শখ ছিল তার মেয়েটি । তার নাম ছিল ক্যামিল । সে ছিল ঠার দিনরাত্রের আনন্দ, তার কাজকর্মের সঙ্গিনী । তাকে তিনি তার বাগানের কাজে পাকা করে তুলেছিলেন । ঠিকমতো বুদ্ধি করে কলমের জোড় লাগাতে লে তার বাপের চেয়ে কম ছিল না। বাগানে সে মালী রাখতে দেয় নি। সে নিজের হাতে মাটি খুঁড়তে, বীজ বুনতে, আগাছা নিড়োতে, বাপের সঙ্গে সমান পরিশ্রম করত। এ ছাড়া রেধেবেড়ে বাপকে খাওয়ানো, কাপড় শেলাই ক’রে দেওয়া, তার হয়ে চিঠির জবাব দেওয়া—সব কাজের ভার নিয়েছিল নিজে । চেস্টনাট গাছের তলায় ওদের ছোট্ট এই ঘরটি সেবায় শাস্তিতে ছিল মধুমাখা । ওদের বাগানের ছায়ায় চ খেতে খেতে পাড়ার লোক সে কথা জানিয়ে যেত। ওরা জবাবে বলত, অনেক দামের আমাদের এই বাসা, রাজার মণিমানিক দিয়ে তৈরি নয়, তৈরি হয়েছে ছুটি প্রাণীর ভালোবাসা দিয়ে, আর কোথাও এ পাওয়া যাবে না । যে ছেলের সঙ্গে মেয়েটির বিবাহের কথা ছিল সেই জ্যাক মাঝে মাঝে কাজে যোগ দিতে আসত ; কানে কানে জিগগেল করত, শুভদিন আসবে কবে । ক্যামিল কেবলই দিন পিছিয়ে দিত ; বাপকে ছেড়ে সে কিছুতেই বিয়ে করতে চাইত না ।