পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

මG8 রবীন্দ্র-রচনাবলী জর্মানির সঙ্গে যুদ্ধ বাধল ফ্রান্সের । রাজ্যের কড়া নিয়ম, পিয়েরকে যুদ্ধে টেনে নিয়ে গেল। ক্যামিল চোখের জল লুকিয়ে বাপকে বললে, কিছু ভয় কোরো না, বাবা । আমাদের এই বাগানকে প্রাণ দিয়ে বাচিয়ে রাখব । মেয়েটি তখন হলদে রজনীগন্ধ তৈরি করে তোলবার পরখ করছিল । বাপ বলেছিলেন, হবে না ; মেয়ে বলেছিল, হবে । তার কথা যদি খাটে তা হলে যুদ্ধ থেকে বাপ ফিরে এলে তাকে অবাক করে দেবে, এই ছিল তার পণ । ইতিমধ্যে জ্যাক এসেছিল ফু দিনের ছুটিতে রণক্ষেত্র থেকে খবর দিতে যে, পিয়ের পেয়েছে সেনানায়কের তক্ৰমা । নিজে না আসতে পেরে তাকে পাঠিয়ে দিয়েছে এই মুখবর দিতে। জ্যাক এসে দেখলে, সেইদিন সকালেই গোলা এসে পড়েছিল ফুলবাগানে। যে তাকে প্রাণ দিয়ে বাচিয়ে রেখেছিল তার প্রাণমৃদ্ধ নিয়ে ছারখার হয়ে গেল বাগানটি। এর মধ্যে দয়ার হাত ছিল এইটুকু, ক্যামিল ছিল না বেঁচে । সকলের আশ্চর্ষ লেগেছিল সভ্যতার জোর হিসাব করে । লম্বা দৌড়ের কামানের গোলা এসে পড়েছিল পচিশ মাইল তফাত থেকে । একে বলে কালের উন্নতি । সভ্যতার কত যে জোর, আর-এক দেশে আর-একবার তার পরীক্ষা হয়েছে । তার প্রমাণ রয়ে গেছে ধুলার মধ্যে, আর-কোথাও নয়। সে চীনদেশে। তাকে লড়তে হয়েছিল বড়ো বড়ো দুই সভ্য জাতের সঙ্গে । পিকিন শহরে ছিল আশ্চর্ষ এক রাজবাড়ি । তার মধ্যে ছিল বহু-কালের-জড়ো-করা মন-মাতানো শিল্পের কাজ । মাহুষের হাতের তেমন গুণপনা আর-কখনো হয় নি, হবে না । যুদ্ধে চীনের হার হল ; হার হবার কথা, কেননা মার-জখমের কারদানিতে সভ্যতার অদ্ভূত বাহাদুরি। কিন্তু, হায় রে আশ্চর্ষ শিল্প, অনেক কালের গুণীদের ধ্যানের ধন, সভ্যতার অল্প কালের আঁচড়ে কামড়ে ছিড়েমিড়ে গেল কোথায় । পিকিনে একদিন গিয়েছিলুম বেড়াতে, নিজের চোখে দেখে এসেছি। বেশি কিছু বলতে মন যায় না । 勒 聯 脅 মানুষ সবার বড়ো জগতের ঘটনা, মনে হ’ত, মিছে না এ শাহের রটনা তখন এ জীবনকে পবিত্র মেনেছি যখন মানুষ বলে মানুষকে জেনেছি।