পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় . M 'eዓ¢ জ্যোতির্বিজ্ঞানী বলেন, এমন-সব নক্ষত্র আছে যারা দীপ্তিহারা, তাদের প্রকাশ নেই, জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর মধ্যে তারা অখ্যাত । জীবজগতে মাস্থ্য জ্যোতিষ্কজাতীয় । মানুষ দীপ্ত নক্ষত্রের মতো কেবলই আপন প্রকাশশক্তি বিকীর্ণ করছে। এই শক্তি তার ভাষার মধ্যে । জ্যোতিক্ষনক্ষত্রের মধ্যে পরিচয়ের বৈচিত্র্য আছে ; কারও দীপ্তি বেশি, কারও দীপ্তি স্নান, কারও দীপ্তি বাধাগ্রস্ত । মানবলোকেও তাই । কোথাও ভাষার উজ্জলতা আছে, কোথাও নেই । এই প্রকাশবান নানা জাতির মাহুষ ইতিহাসের আকাশে আলোক বিস্তীর্ণ করে আছে । আবার কাদেরও বা আলো নিবে গিয়েছে, আজ তাদের ভাষা লুপ্ত । জাতিক সত্তার সঙ্গে সঙ্গে এই-যে ভাষা অভিব্যক্ত হয়ে উঠেছে এ এতই আমাদের অস্তরঙ্গ যে, এ আমাদের বিস্মিত করে না, যেমন বিস্মিত করে ন; আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি— যে চোখের দ্বার দিয়ে নিত্যনিয়ত আমাদের পরিচয় চলছে বিশ্ব প্রকৃতির সঙ্গে । কিন্তু একদিন ভাষার স্বষ্টিশক্তিকে মহুিষ দৈবশক্তি বলে অনুভব করেছে সে কথা আমরা বুঝতে পারি যখন দেখি য়িহুদি পুরাণে বলেছে, স্বষ্টির আদিতে ছিল বাক্য ; যখন শুনি ঋগ্বেদে বাগদেবতা আপন মহিমা ঘোষণা ক'রে বলছেন— 曬 আমি রাজী । আমার উপাসকদের আমি ধনসমূহ দিয়ে থাকি । পূজনীয়দের মধ্যে আমি প্রথম । দেবতারা আমাকে বহু স্থানে প্রবেশ করতে দিয়েছেন । প্রত্যেক মানুষ, যার দৃষ্টি আছে, প্রাণ আছে, শ্রুতি আছে, আমার কাছ থেকেই সে অল্প গ্রহণ করে । যারা আমাকে জানে না তারা ক্ষীণ হয়ে যায় । আমি স্বয়ং যা বলে থাকি তা দেবতা এবং মাহুষদের দ্বারা সেবিত । আমি যাকে কামনা করি তাকে বলবান করি, স্বষ্টিকর্তা করি, ঋষি করি, প্রজ্ঞাবান করি । रे কোঠাবাড়ির প্রধান মসলা ইট, তার পরে চুন-স্বরকির নানা বাধন। ধ্বনি দিয়ে স্বাটবাধা শব্দই ভাষার ইট, বাংলায় তাকে বলি ‘কথা’। নানারকম শৰচিহ্নের গ্রন্থি দিয়ে এই কথাগুলোকে গেথে গেথে ছয় ভাষা । মাটির তাল নিয়ে চাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কুষোর গড়ে তোলে হাড়িকুড়ি, নানা খেলনা, নানা মূতি। মানুষ সেইরকম গলার জাওয়াজটাকে ঠোঁটে দাতে জিভে