পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় o ©ዓዓ র্যাদের আছে। প্রাচীন যুগের ঘোড়া আর এখনকার ঘোড়ায় প্রভেদ আছে বিস্তর, কিন্তু তাদের কঙ্কালের ছাদ দেখলে বোঝা যায়, তারা এক বংশের । ভাষার মধ্যেও সেই কঙ্কালের ছাদের মিল পেলেই তাদের একজাতীয়তা ধরা পড়ে । ভাষা বানিয়েছে মানুষ, এ কথা কিছু সত্য আবার অনেকখানি সত্য নয় । ভাষা যদি ব্যক্তিগত কোনো মামুষের বা দলের কৃতকার্য হত তা হলে তাকে বানানো বলতুম ; কিন্তু ভাষা একটা সমগ্র জাতের লোকের মন থেকে, মুখ থেকে, ক্রমশই গড়ে উঠেছে । ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীর জমিতে ভিন্ন ভিন্ন রকমের গাছপালা যেমন অভিব্যক্ত হয়ে ওঠে, ভাষার মূল প্রকৃতিও তেমনি । মাহুষের বাগযন্ত্র যদিও সব জাতের মধ্যেই একই ছাদের তবু তাদের চেহারায় তফাত আছে, এও তেমনি । বাগযন্ত্রের একটাকিছু স্বল্প ভেদ আছে, তাতেই উচ্চারণের গড়ন যায় বদলে । ভিন্ন ভিন্ন জাতের মুখে স্বরবর্ণ-ব্যঞ্জনবর্ণের মিশ্রণ ঘটবার রাস্তায় তফাত দেখতে পাওয়া যায় । তার পরে তাদের চিস্তার আছে ভিন্ন ভিন্ন ছাচ, তাতে শব্দ জোড়বার ধরণ ও ভাষার প্রকৃতি আলাদা ক'রে দেয় । ভাষা প্রথমে আরম্ভ হয় নানারকম দৈবাং শব্দসংঘাতে, তার পরে মামুষের দেহমনের স্বভাব অহুসরণ করে সেই-সব সংকেতের ধারায় সে ভরে উঠতে থাকে । পথহীন মাঠের মধ্যে দিয়ে যখন একজন বা দু-চারজন মাহুষ কোনে-এক সময়ে চলে গেছে, তখন তাদের পায়ের চাপে মাটি ও ঘাস চাপা পড়ে একটা আকস্মিক সংকেত তৈরি হয়েছে । পরবর্তী পথিকেরা পায়ের তলায় তারই আহবান পায় । এমনি করে পদক্ষেপের প্রবাহে এ পথ চিহ্নিত হতে থাকে । যদি পরিশ্রম বাচাবার জন্তে মানুষ এ পথ বানাতে বিশেষ চেষ্টা করত তা হলে রাস্তা হত সিধে ; কিন্তু দেখতে পাই, মেঠো পথ চলেছে বেঁকেচুরে । তাতে রাস্ত দীর্ঘ হয়েছে কি না সে কথা কেউ বিচার করে নি । ভাষার আকস্মিক সংকেত এমনি ক’রে অলক্ষ্যে টেনে নিয়ে চলেছে যে পথে লেটা আকাবাকা পথ । হিসেব ক'রে তৈরি হয় নি, হয়েছে ইশারা থেকে ইশারায় । পুরোনো রাস্তা কিছু কিছু জীর্ণ হয়েছে, আবার তার উপরে নতুন সংস্কারেরও হাত পড়েছে। অনেক ধু ত আছে তার মধ্যে, নানা স্থানেই সে যুক্তিসংগত নয়। না হোক, তবু সে প্রাণের জিনিস, সমস্ত জাতের প্রাণমনের সঙ্গে সে গেছে এক হয়ে। Nව්‍ර মাছুষের একটা গুণ এই যে সে প্রতিমূতি গড়ে ; তা লে পটে হোক, পাথরে হোক, মাটিতে ধাতুতে হোক। অর্থাৎ একটি বস্তর অস্থরুপে আর-একটিকে বানাতে লে আনন্দ