পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\*● রবীন্দ্র-রচনাবলী আমাদের ভাষায় একটা সরকারি শব্দ আছে, ‘পদার্থ”। বলা বাহুল্য, জগতে পদার্থ ব’লে কোনো জিনিস নেই ; জল মাটি পাথর লোহা আছে। এমনতরো অনির্দিষ্ট ভাবনাকে মাহষ তার ভাষায় বঁধে কেন । জরুরি দরকার আছে বলেই বাধে । বিজ্ঞানের গোড়াতেই এ কথাটা বলা চাই যে, পদার্থ মাত্রই কিছু না কিছু জায়গা জোড়ে। ঐ একটা শব্দ দিয়ে কোটি কোটি শব্দ বাচানো গেল । অভ্যাস হয়ে গেছে বলে এ স্বাক্টর মূল্য ভুলে আছি। কিন্তু ভাষার মধ্যে এই-সব অভাবনীয়কে ধরা মানুষের একটা মস্ত কীতি । বোঝা-হাঙ্কা-করা এই-সব সরকারি শব্দ দিয়ে বিজ্ঞান দশন ভরা । সাহিত্যেও তার কমতি নেই । এই মনে করো, “হৃদয়’ শব্দটা বলি অত্যন্ত সহজেই । কারও হৃদয় আছে বা হৃদয় নেই, যত সহজে বলি তত সহজে ব্যাখ্যা করতে পারি নে । কারও 'মনুষত্ব আছে বলতে কী আছে তা সমস্তটা স্পষ্ট করে বলা অসাধ্য। এ ক্ষেত্রে ধ্বনির প্রতীক না দিয়ে অন্তরকম প্রতীকও দেওয়া যেতে পারে । মতুযুত্ব ব'লে একটা আকারহীন পদার্থকে কোনে-একটা মূতি দিয়ে বলাও চলে। কিন্তু মূতিতে জায়গা জোড়ে, তার ভার আছে, তাকে বয়ে নিয়ে যেতে হয় । ত; ছাড়া তাকে বৈচিত্র্য দেওয়া যায় না । শব্দের প্রতীক আমাদের মনের সঙ্গে মিলিয়ে থাকে, অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে তার অর্থের বিস্তার হতেও বাধ ঘটে ন} । এ কথাটা জেনে রাখা ভালো যে, এক্ট-সব ভার-লাঘব করা সরকারি অর্থের শব্দগুলিকে ইংরেজিতে বলে ম্যাবস্ট্রাক্ট, শব্দ । বাংলায়, এর একটা নতুন প্রতিশব্দের দরকার । বোধ করি "নির্বস্তুক’ বললে কাজ চলতে পারে । বস্তু থেকে গুণকে নিষ্ক্রাস্ত করে নেওয়া যে ভাবমাত্র তাকে বলবার ও বোঝাবার জন্যে নির্বস্তুক শব্দটা হয়তো ব্যবহারের যোগ্য । এই অ্যাবস্টাক্ট, শব্দগুলোকে আশ্রয় করে মানুষের মন এত দূরে চলে ঘেতে পেরেছে যত দূরে তার ইন্দ্রিয়শক্তি যেতে পারে না, যত দূরে তার কোনো ধানবাহন পৌছয় ন! । 8 মানুষ যেমন জানবার জিনিস ভাষা দিয়ে জানায় তেমনি তাকে জানাতে ছয় স্বর্থদুঃখ, ভালো লাগ - মন্দ লাগা, নিন্দ-প্রশংসার সংবাদ । ভাবে ভঙ্গীতে, ভাষাহীন আওয়াজে, চাহনিতে, হাসিতে, চোখের জলে এই-সব অমুভূতির অনেকখানি বোঝানো যেতে পারে । এইগুলি হল মহিষের প্রকৃতিদত্ত বোবার ভাষা, এ ভাষায় মাছুষের ভাৰপ্রকাশ প্রত্যক্ষ । কিন্তু.স্বথ দুঃখ ভালোবাসার বোধ অনেক স্বয়ে যায়, উর্ধ্বে বায় ;