পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○V-8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আমরা শ্রেষ্ঠ বলি যা রসজ্ঞদের অনুভূতির কাছে আপন রচিত রসকে রূপকে অবগুস্বীকার্য করে তোলে। এমনি করে ভাষার জিনিসকে মামুষের মনের কাছে সত্য করে তোলবার নৈপুণ্য যে কী, তা রচয়িতা স্বয়ং হয়তো বলতে পারেন না। প্রাকৃতিক জগতে অনেক-কিছুই আছে যা অকিঞ্চিৎকর বলে আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। কিন্তু অনেক আছে যা বিশেষভাবে সুন্দর, যা মহীয়ান, ষা বিশেষ কোনো ভাবস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। লক্ষ লক্ষ জিনিসের মধ্যে তাই সে বাস্তবরূপে বিশেষভাবে আমাদের মনকে টেনে নেয়। মামুষের রচিত সাহিত্যজগতে সেই বাস্তবের বাছাই করা হতে থাকে। মানুষের মন যাকে বরণ করে নেয় সব-কিছুর মধ্যে থেকে সেই সত্যের স্বষ্টি চলছে সাহিত্যে ; অনেক নষ্ট হচ্ছে, অনেক থেকে যাচ্ছে । এই সাহিত্য মানুষের আনন্দলোক, তার বাস্তব জগং । বাস্তব বলছি এই অর্থে যে, সত্য এখানে আছে বলেই সত্য নয়, অর্থাৎ এ বৈজ্ঞানিক সত্য নয়— সাহিত্যের সত্যকে মাহুষের মন নিশ্চিত মেনে নিয়েছে বলেই সে সত্য । মানুষ জানে, জানায় ; মানুষ বোধ করে, বোধ জাগায় । মামুষের মন কল্পজগতে সঞ্চরণ করে, স্বষ্টি করে কল্পরূপ : এই কাজে ভাষা তার যত সহায়তা করে ততই উত্তরোত্তর তেজস্বী হয়ে উঠতে থাকে । সাহিত্যে যে স্বতঃপ্রকাশ সে আমাদের নিজের স্বভাবের । তার মধ্যে মানুষের অন্তরতর পরিচয় আপনিই প্রতিফলিত হয়। কেন হয় তার একটু আলোচনা করা যেতে পারে । যে সত্য আমাদের ভালো লাগা - মন্দ লাগার অপেক্ষা করে না, অস্তিত্ব ছাড়া যার অন্ত কোনো মূল্য নেই, সে হল বৈজ্ঞানিক সত্য। কিন্তু যা-কিছু আমাদের স্বখন্থঃখবেদনার স্বাক্ষরে চিহ্নিত, যা আমাদের কল্পনার দৃষ্টিতে স্থপ্রত্যক্ষ, আমাদের কাছে তাই বাস্তব। কোনটা আমাদের অনুভূতিতে প্রবল করে সাড়া দেবে, আমাদের কাছে দেখা দেবে নিশ্চিত রূপ ধরে, সেটা নির্ভর করে আমাদের শিক্ষাদীক্ষার, আমাদের স্বভাবের, আমাদের অবস্থার বিশেষত্ত্বের উপরে। আমরা যাকে বাস্তব বলে গ্রহণ করি সেইটেতেই আমাদের যথার্থ পরিচয় । এই বাস্তবের জগৎ কারও প্রশস্ত, কারও সংকীর্ণ। কারও দৃষ্টতে এমন একটা সচেতন সজীবতা আছে, বিশ্বের ছোটো বড়ো অনেক-কিছুই তার অন্তরে সহজে প্রবেশ করে। বিধাতা তার চোখে লাগিয়ে রেখেছেন বেদনার স্বাভাবিক দূরবীক্ষণ অণুবীক্ষণ শক্তি। জাৰার কারও কারও জগতে আন্তরিক কারণে বা বাহিরের অবস্থাবশত ৰেশি ক’রে আলো পড়ে বিশেষ কোনো সংকীর্ণ পরিধির মধ্যে। তাই মাছুষের বাস্তৰবোধের বিশেষত্ব ও