পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৯২ 帖 রবীন্দ্র-রচনাবলী سوا বাংলাভাষা ভারতবর্ষের প্রায় পাঁচ কোটি লোকের ভাষা। হিন্দি বা হিন্দুস্থানি যাদের যথার্থ ঘরের ভাষা, শিক্ষণ-করা ভাষা নয়, স্বনীতিকুমার দেখিয়েছেন, তাদের সংখ্যা চার কোটি বারো লক্ষের কাছাকাছি । এর উপরে আছে আট কোটি আটাশি লক্ষ লোক যারা তাদের খাটি মাতৃভাষা বর্জন ক’রে সাহিত্যে সভাসমিতিতে ইস্কুলে আদালতে হিন্দুস্থানির শরণাপন্ন হয়। তাই হিন্দুস্থানিকে ভারতের রাষ্ট্রীয় ব্যবহারের জন্তে এক ভাষা বলে গণ্য করা যেতে পারে । তার মানে, বিশেষ কাজের প্রয়োজনে কোনো বিশেষ ভাষাকে কৃত্রিম উপায়ে স্বীকার করা চলে, যেমন আমরা ইংরেজি ভাষাকে স্বীকার করেছি। কিন্তু ভাষার একটা অকৃত্রিম প্রয়োজন আছে ; সে প্রয়োজন কোনো কাজ চালাবার জন্তে নয়, আত্মপ্রকাশের জন্তে । রাষ্ট্রিক কাজের সুবিধা করা চাই বই-কি, কিন্তু তার চেয়ে বড়ে কাজ দেশের চিত্তকে সরল সফল ও সমুজ্জল করা। সে কাজ আপন ভাষা নইলে হয় না। দেউড়িতে একটা সরকারি প্রদীপ জালানো চলে, কিন্তু একমাত্র তারই তেল জোগাবার খাতিরে ঘরে ঘরে প্রদীপ নেবানো চলে না । এই প্রসঙ্গে যুরোপের দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক । সেখানে দেশে দেশে ভিন্ন ভিন্ন ভাষ, অথচ এক সংস্কৃতির ঐক্য সমস্ত মহাদেশে । সেখানে বৈষয়িক অনৈক্যে যারা হানাহানি করে এক সংস্কৃতির ঐক্যে তারা মনের সম্পদ নিয়তই অদল বদল করছে। ভিন্ন ভিন্ন ভাষার ধারায় বয়ে নিয়ে আসা পণ্যে সমৃদ্ধিশালী, যুরোপীয় চিত্ত জয়ী হয়েছে সমস্ত পৃথিবীতে । তেমনি ভারতবর্ষেও ভিন্ন ভিন্ন ভাষার উৎকর্ষ-সাধনে দ্বিধা করলে চলবে না। মধ্যযুগে যুরোপে সংস্কৃতির এক ভাষা ছিল লাটিন । সেই ঐক্যের বেড়া ভেদ করেই যুরোপের ভিন্ন ভিন্ন ভাষা যেদিন আপন আপন শক্তি নিয়ে প্রকাশ পেলে সেই দিন যুরোপের বড়োদিন । আমাদের দেশেও সেই বড়োদিনের অপেক্ষা করব— সব ভাষা একাকার করার দ্বারা নয়, সব ভাষার আপন আপন বিশেষ পরিণতির দ্বারা । > বাংলাভাষাকে চিনতে হবে ভালো ক'রে ; কোথায় তার শক্তি, কোথায় তার ছুর্বলতা, দুইই আমাদের জানা চাই । রূপকথায় বলে, এক-যে ছিল রাজা, তার দুই ছিল রানী, স্বয়োরানী আর দুয়োরানী। তেমনি বাংলাবাক্যাধীপেরও আছে হই রানী— একটাকে আদর করে