পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় రిపె(t ঢালা । ইংরেজি ভাষায় দেখা যায়, তার পুরাতন পরিচিত প্রব্যের নামগুলি স্বাক্সন এবং কেন্ট,। এগুলি সব আদিম জাতির আদিম অবস্থার সম্পত্তি। সেই পুরাতন কাল থেকে যতই দূরে চলে এসেছে ততই তার ভাষাকে অধিকার করেছে গ্রীক ও লাটিন। আমাদেরও সেই দশা । খাটি বাংলা ছিল আদিম কালের, সে ৰাংলা নিয়ে এখনকার কাজ ষোলো-আনা চলা অসম্ভব । অভিধান দেখলে টের পাওয়া যাবে ইংরেজি ভাষার অনেকখানিই গ্রীক-লাটিনে গড়া । বস্তুত তার হাড়ে মাস লেগেছে ঐ ভাষায় । কোনো বিশেষ লেখার রচনারীতি হয়তো গ্ৰীক-লাটিন-ঘেঁষা, কোনোটার বা অ্যাংলো-স্তাকৃলনের ছাদ । তাই বলে ইংরেজি ভাষা দুটো দল পাকিয়ে তোলে নি । কৃত্রিম ছাচে ঢালাই করা একটা স্বতন্ত্ৰ সাহিত্যিক ভাষা খাড় ক’রে তাই নিয়ে কোনো সম্প্রদায় কৌলীস্তের বড়াই করে না । নানা বন্দর থেকে নানা শব্দসম্পদের আমদানি ক’রে কথার ও লেখার একই তহবিল তারা ভর্তি করে তুলেছে। ওদের ভাষার খিড়কির দরজায় একতারা-বাজিয়ের আর সদর দরজায় বীণার ওস্তাদের ভিড় হয় না । আমাদের ভাষাও সেই এক বড়ো রাস্তার পথেই চলেছে। কথার ভাষার বদল চলছে লেখার ভাষার মাপে । পঞ্চাশ বছর পূর্বে চলতি ভাষায় যে-সব কথা ব্যবহার করলে হাসির রোল উঠত, আজ মুখের বাক্যে তাদের চলাফেরা চলছে অনায়াসেই। মনে তো আছে, আমার অল্প বয়সে বাড়ির কোনো চাকর যখন এসে জানালে ‘একজন বাবু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছেন, মনিবদের আসরে চার দিক থেকে হালি ছিটকে পড়ল। যদি সে বলত ‘আপিক্ষে তা হলে সেটা মাননসই হ’ত । আবার অল্পকিছুদিন আগে আমার কোনো ভূত্য মাংসের তুলনায় মাছ খাওয়ার অপদার্থতা জানিয়ে যখন আমাকে বললে ‘মাছের দেহে সামর্থ্য কতটুকুই বা আছে, আমার সম্বেহ হয় নি যে সে উচ্চ প্রাইমারি স্কুলে পরীক্ষণ পাশ করেছে । আজ সমাজের উপরতলায় নীচের তলায় ভাষাব্যবহারে আর্ধ-অনার্ধের মিশোল চলেছে । মনে করো সাধারণ আলাপে আজ যদি এমন কথা কেউ বলে ৰে ‘সভ্যজগতে অর্থনীতির সঙ্গে গ্রন্থি পাকিয়ে রাষ্ট্রনীতির জটিলতা যতই বেড়ে উঠছে শাস্তির সম্ভাবনা যাচ্ছে দূরে, তা হলে এই মাত্র সন্দেহ করব, লোকটা বাংলার সঙ্গে ইংরেজি মেশাবার বিরুদ্ধে । কিন্তু এই বাক্যকে প্রহসনে উদ্ভূত করবার যোগ্য বলে কেউ মনে করবে না। নিঃসন্দেহ এর শৰাগুলো হয়ে উঠেছে সাহিত্যিক, কেননা বিষয়টাই তাই। পঞ্চাশ বছর আগে এরকম বিষয় নিয়ে ঘরোয় আলোচনা হত না, এখন তা হয়ে থাকে, কাজেই কথা ও লেখার সীমানার ভেদ থাকছে না । সাহিত্যিক দণ্ডনীতির ধারা থেকে