পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় \రివెవి তর্ক ওঠে, বাংলাদেশে কোন প্রদেশের ভাষাকে সাহিত্যিক কথ্যভাষা বলে মেনে নেব । উত্তর এই যে, কোনো বিশেষ কারণে বিশেষ প্রদেশের ভাষা স্বতই সর্বজনীনতার মর্যাদা পায়। যে-সকল সৌভাগ্যবান দেশে কোনো একমাত্র ভাষা বিনা তর্কে সর্বদেশের বাণীরূপে স্বীকৃত হয়েছে, সেখানেও নানা প্রাদেশিক উপভাষা আছে । বিশেষ কারণে টস্কানি প্রদেশের উপভাষা সমস্ত ইটালির এক ভাষা বলে গণ্য হয়েছে । তেমনি কলকাতা শহরের নিকটবর্তী চার দিকের ভাষা স্বভাবতই বাংলাদেশের সকলদেশী ভাষা বলে গণ্য হয়েছে। এই এক ভাষার সর্বজনীনতা বাংলাদেশের কল্যাণের বিষয় বলেই মনে করা উচিত। এই ভাষায় ক্রমে পূর্ববঙ্গেরও হাত পড়তে আরম্ভ হয়েছে, তার একটা প্রমাণ এই যে, আমরা দক্ষিণের লোকেরা ‘সাথে’ শব্দটা কবিতায় ছাড়া সাহিত্যে বা মুখের আলাপে ব্যবহার করি নে। আমরা বলি লঙ্গে । কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কানে যেমনি লাগুক, সঙ্গে’ কথাটা ‘সাথে’র কাছে হার মেনে আসছে। আরও একটা দৃষ্টান্ত মনে পড়ছে । মাত্র চারজন লোক : এমন প্রয়োগ আজকাল প্রায় শুনি । বরাবর বলে এসেছি ‘চারজনমাত্র লোক’, অর্থাং চারজনের দ্বারা মাত্রা-পাওয়া, পরিমিত-হওয়া লোক। অবশু ‘মাত্র’ শব্দ গোড়ায় বললে কথাটাতে জোর দেবার স্ববিধে হয়। ভাষা সব সময়ে যুক্তি মানে না। যা হোক, যে দক্ষিণী বাংলা লোকমুখে এবং সাহিত্যে চলে যাচ্ছে তাকেই আমরা বাংলা ভাষা বলে গণ্য করব। এবং আশা করব, সাধু ভাষা তাকেই আসন ছেড়ে দিয়ে ঐতিহাসিক কবরস্থানে বিশ্রামলাভ করবে। সেই কবরস্থান তীর্থস্থান হবে, এবং অলংকৃত হবে তার স্মৃতিশিলাপট । >> মামুষের উদ্ভাবনী প্রতিভার একটা কীর্তি হল চাকা বানানো । চাকার সঙ্গে একটা নতুন চলৎশক্তি এল তার সংসারে । বস্তুর বোঝা সহজে নড়ে না, তাকে পরম্পরের মধ্যে চালাচালি করতে দুঃখ পেতে হয় । চাকা সেই জড়ত্বের মধ্যে প্রাণ এনে দিলে। আদানপ্রদানের কাজ চলল বেগে । ভাষার দেশে সেই চাকা এসেছে ছন্দের রূপে । সহজ হল মোট-বাধা কথাগুলিকে চালিয়ে দেওয়া । মুখে মুখে চলল ভাষার দেনা-পাওনা। কবিতার বিশেষ হচ্ছে তার গতিশীলতা। সে শেষ হয়েও শেষ হয় না। গন্তে যখন বলি একদিন শ্রাবণের রাত্রে বৃষ্টি পড়েছিল, তখন এই বলার মধ্যে এই খবরটা ՀՆկՀ*