পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪১২ রবীন্দ্র-রচনাবলী বাংলা বর্ণমালায় ই আর উ সবচেয়ে উদ্যমশীল স্বরবর্ণ। রাসায়নিক মহলে অক্সিজেন গ্যাস নানা পদার্থের সঙ্গে নানা বিকার ঘটিয়ে দিয়ে নিজেকে রূপান্তরিত করে, ই স্বরবর্ণটা সেইরকম। অন্তত আ’কে বিগড়িয়ে দেবার জন্তে তার খুব উদ্যম, যেমন : থলি+আ— থ’লে, করি+আ =ক’রে। ইআ প্রত্যয়ের ই পূর্ববর্তী একটা বর্ণকে ডিঙিয়ে শব্দের আদি ও অস্তে বিকার ঘটায়, তার দৃষ্টাস্ত ; জাল+ইআ- জেলে, বালি+ইঅা-বেলে, মাটি+ইআ- মেটে, লাঠি+ইআল - লেঠেল । পরে যেখানে আকার আছে ই সেখানে আ'এ হাত না দিয়ে নিজেকেই বদলে ফেলেছে, তার দৃষ্টান্ত যথা : মিঠাই-মেঠাই, বিড়াল - বেড়াল, শিয়াল = শেয়াল, কিতাব = কেতাব, খিতাব = খেতাব । আবার নিজেকে বজায় রেখে আকারটাকে বিগড়িয়ে দিয়েছে, তার দৃষ্টান্ত দেখো : হিসাব – হিসেব, নিশান=নিশেন, বিকাল = বিকেল, বিলাত – বিলেত। ই কোনো উৎপাত করে নি এমন দৃষ্টান্তও আছে, সে বেশি নয়, অল্পই, যেমন : বিচার নিবাস কৃষাণ পিশাচ । একদা বাংলা ক্রিয়াপদে আ স্বরবর্ণের যথেষ্ট প্রতিপত্তি ছিল । করিলা চলিলা । করিব যাইবা : এইটেই নিয়ম ছিল । ইতিমধ্যে ই উপদ্রব বাধিয়ে দিলে । নিরীহ আকারকে সে শাস্তিতে থাকতে দেয় না ; দিলা'কে করে তুলল ‘দিলে’, ‘করিবা হল 'করবে’ । বাংলা ক্রিয়াপদের সদ্য-অতীতে ইল প্রত্যয়ে বিকল্পে ও এবং এ লাগে, যেমন : করলো করলে । ‘করিল' হয়েছে “করলো', ইকারের সঙ্গে সম্বন্ধ ছিন্ন ক'রে । ‘করিলা’ থেকে করলে’ হয়েছে ইকারের শাসন মেনেই, অর্থাৎ আ'কে নিকটে পেয়ে ই তার যোগে একটা এ ঘটিয়েছে। মনে করিয়ে দেওয়া ভালো, দক্ষিণবঙ্গের কথ্য বাংলার কথা বলছি। এই ভাষায় ‘করিলাম” যদি ‘করলেম' হয়ে থাকে সে তার স্বরবর্ণের প্রবৃত্তিবশত। এই কারণেই ‘হইয়া' হয়েছে ‘হয়ে’ । বাংলায় উ স্বরবর্ণ৪ খুব চঞ্চল । ইকার টেনে আনে এ স্বরকে, আর ও স্বরকে টানে উকার ; পট+উত্মা = পোটো । মাঝের উ ডাইনে বায়ে দিলে স্বর বদলিয়ে । শবের আস্তক্ষরে যদি থাকে জা, তা হলে এই সব্যসাচী বা দিকে লাগায় এ, ডান দিকে ও। মাঠ’ শৰে উমা প্রত্যয় যোগে "মাষ্ট্রক্ষা, হয়ে গেল 'মেঠো’ , ‘কাঠুআ থেকে 'কেঠো । উকারের আত্মবিসর্জনের যেমন দৃষ্টান্ত দেখলুম, তার আত্মপ্রতিষ্ঠারও দৃষ্টান্ত আছে, যেমন : কুড়াল=কুড়ল, উনান-উস্থান। কোথাও বা আস্তক্ষরের উকার পরবর্তী আকারকে ও ক’রে দিয়ে নিজে খাটি থাকে, যেমন : জুতা-জুতো, গুড়া-গুড়ো,