পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8○8 রবীন্দ্র-রচনাবলী উহ আছে সে নিবাসঘটিত নয়, সে হচ্ছে লোকটার তৈার বা মূর্খতার পরিচয় নিয়ে। কোথাকার সাধুপুরুষ এসে জুটল : লোকটার সাধুতা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ হচ্ছে না। “ধেমতি’ তেমতি’ পষ্ঠে আশ্রয় নিয়েছে। “সেইমতো’ ’এইমতো এখনো টিকে আছে । কিন্তু এর মতো’ ‘তার মতো'র ব্যবহারটাই বেশি। করণকারকে রয়ে গেছে ‘কোনোমতে । অথচ কোনোমতো’ বা ‘কোনমতো' শব্দটা নেই। ‘কেন’ শব্দটা সর্বনাম । এর অর্থ প্রশ্নবাচক, এর রূপটা করণকারকের । ঘটনা ঘটল কেন : অর্থাৎ ঘটল কী কারণের দ্বারা । ‘কেনে বা’ প্রাচীন কাব্যেও পড়েছি, গ্রাম্য লোকের মুখেও শোনা যায় । কেন, কেন বা, কেনই বা । ‘লোকটা কেন কাদছে" এ একটা সাধারণ প্রশ্ন । ‘কেন বা কাদছে বললে কাল্লাটা যে ব্যর্থ বা অবোধ্য সেইটে বলা হল । কেন বা এলে বিদেশে : অর্থাৎ বিদেশে আসাটা নিফল । কেনই বা মরতে এখানে এলুম : এ হল পরিতাপের ধিক্কার। এর মধ্যে লক্ষ্য করবার বিষয় এই যে, এই প্রয়োগগুলির সবগুলোই অপ্রিয়তাব্যঞ্জক। কেন তিনি তিব্বতি পড়ছেন তা নিজেই জানেন না : এ সহজ কথা । যেই বলা হল ‘কেনই বা তিনি তিব্বতি পড়তে বললেন? আমনি বোঝা যায়, কাজটা স্ববুদ্ধির মতো হয় নি। ‘কেন’ শব্দের এক বর্গের শব্দ যেন হেন’। ‘যেন সাদৃগু বোঝাতে । ‘হেন’ শম্বের প্রয়োগ বিশেষণে, যথা : হেন রূপ দেখি নাই কতু, ছেন কাজ নেই যা সে করতে পারে না, সে-হেন লোকও তেড়ে এল । হেন কাজ = এমন কাজ । সে-হেন = তার মতো । ‘যেন’ শব্দটাতে বিদ্ধপের ভঙ্গী লাগানো চলে : যেন নবাব খাঞ্জে থ, যেন আহলাদে পুতুল, যেন কাত্তিকটি, যেন ডানাকাটা পরী। বাংলায় বিস্কপের ভঙ্গীরীতি অত্যন্ত স্বলভ । ‘তেন’ শব্দের ব্যবহার লোপ পেয়েছে। ‘হেন’ শব্দের অর্থ ‘মতো' কিংবা এইমতো । এর সঙ্গে তুলনা করলে বোঝা যায় ‘তেন' শব্দের অর্থ 'সেইমতো’। ‘ছেনতেন জোড়া শব্দ এখনো চলিত আছে । হেন-তেন কত কী ব’কে গেল : অর্থাৎ, ব’কল কখনো এরকম কখনো সেরকম, অসংলগ্ন বকুনি । প্রাচীন বাংলায় দেখেছি ‘ষেন কস্তা তেন বর' । এখানে "ফেন' শব্দের যে-হেন’ অর্থ। ‘যেন’ শব্দটা হেন’ শব্দের জুড়ি। পদাবলীতে পাওয়া গেছে, ‘বেঙ্ক’ ( যে-ছেন)। বোঝা যায় এই ‘হেন শব্দের যোগেই যেন শৰ চেহারা পেয়েছে। আধুনিক বাংলায় 'ৰেন শৰটা তুলনা-উপমার কাজেই লাগে, কিন্তু পুরাতন বাংলায় তার অর্থের ৰিকতি