পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৩৬ I রবীন্দ্র-রচনাবলী বোঝাতে, যেমন : কী স্বন্দর। পূর্বেই বলেছি তীক্ষুধার স্বরবর্ণ ই সঙ্গে না থাকলে এর সৌজন্ত বজায় থাকে। বিশেষণ-প্রয়োগে ‘কী, যথা : কী কাজে লাগবে জানি নে । ‘কী’ বিশেষণ শৰে অচেতন বা নির্বস্তুক বা অনির্দিষ্ট বোঝায় : ওর কী দশা হবে, কী হ’তে কী হল । বিকল্প বোঝাতে ওর প্রয়োগ আছে, যেমন : কী রাম কী তাম কাউকেই বাদ দেওয়া যায় না। কোন বিশেষণ জড় চেতন দুইয়েই লাগে। সর্বনামের কর্মকারকে সাধারণত কে বিভক্তি : আমাকে তোমাকে । “লে’র বেলায় ‘তাকে’ কিংবা ‘সেটিকে’ ‘সেটাকে’ । বাংলা সর্বনাম করণকারকে একটা বিভক্তির উপরে আর-একটি চিহ্ন জোড়া হয় । বিভক্তিটা সম্বন্ধপদের, যেমন ‘আমার', ওতে জোড়া হয় ‘দ্বারা’ শব্দ ; আমার দ্বারা । আর-একটা শব্দচিহ্ন আছে দিয়ে' । তার বেলায় মূলশৰে লাগে কর্মকারকের বিভক্তি : আমাকে দিয়ে । ‘কী’ শব্দের করণকারকের রূপ : কিলে, কিসে ক’রে, কী দিয়ে, কিসের দ্বারা । অধিকরণেরও রূপ ‘কিলে’, যথা : এ লেখাটা কিসে আছে । এ-সমস্তই একবচনের ও অজাববাচকের দৃষ্টান্ত, এরা বহুবচনে হবে : এগুলোকে দিয়ে, সেগুলোকে দিয়ে, কোনগুলোকে দিয়ে । অসম্মানে মামুষের বেলা হয় ; নচেৎ হয় : এদের দিয়ে, তাদের দিয়ে, ওদের দিয়ে । সাধারণত বাংলায় বিশেষণপদের বহুবচনক্কপ নেই । ওদের অধিকৃত বিশেষ্য শব্দগুলিতে বহুবচনের ব্যবস্থা করতে হয়, যথা : বুনো পশুদের, পিতলের ঘাটগুলোর । বলা বাহুল্য ঘটিদের’ হয় না, পশুদের’ হয় । রা এবং দের বিভক্তি জড়বাচক শব্দের অধিকারে নেই। তার পক্ষে গুলো শব্দই বৈধ । অথচ গুলো অপর পক্ষের ব্যবহারেও লাগে। কিন্তু পরিমাণবাচক ‘এত’ ‘তত’ ‘ধত’ ‘কত’ বিশেষণের সঙ্গে বহুবচন-বিভক্তি গুলো যুক্ত হয়। তা ছাড়া ‘এ’ ‘গে’ ‘ধে’ ও ‘ঐ সেই’ ‘কোন শব্দের সঙ্গে বহুবচনে কর্তৃপদে গুলো ও কর্মকারকে বা সম্বন্ধে দের যোগ করা হয় । বাংলা সর্বনামশব্দ-প্রয়োগে একটা খটকার জায়গা আছে । “আমাকে তোমাকে খাওয়াতে হবে" এমন কথা শোনা যায়। কে কাকে খাওয়াবে তর্কট পরিষ্কার হয় না। এমন স্থলে যিনি খাওয়াবার কর্তা তাকে সম্বন্ধ-আসনে বসালে কথাটা পাকা হয়। আর সেটা যদি ক্রিয়াপদের পূর্বেই থাকে তা হলে দ্বিধা মেটে। "আমাকে তোমার খাওয়াতে হবে' বাক্যটা স্পষ্ট। গোল বাধে বহুবচনের বেলায়। কেননা বহুবচনের সম্বন্ধপদে দের আর কর্মকারকের দের একই চেহারার । এর একমাত্র উপায় কে বিভক্তি দ্বারা কর্মকারককে নিঃসংশয় করা। আমাদেরকে