পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় 82や ইজিতের মধ্যে সেরে দেওয়া হয়েছে। ‘কালিকি?” এটা একটা ভঙ্গীওয়াল কথা । শুধু ‘কালো' বলে যখন মনে তৃপ্তি হয় না তখন তার সঙ্গে 'ৰিটি’ যোগ করে কালিমাকে আরও অবজ্ঞায় ঘনিয়ে তোলা হয় । ভাবনাচিস্তা আপদবিপদ কাটছাট ছাকডাক শৰে অর্থের বিস্তার করে । শুধু ‘চিন্তা’ দুঃখজনক, কিন্তু ‘ভাবনাচিন্তা’ বিচিত্র এবং দীর্ঘায়িত। স্বতন্ত্র শব্দে ‘জাপদ কিংবা ‘বিপদ’ বলতে যে বিশেষ ঘটনা বোঝায়, যুক্ত শব্দে ঠিক তা বোঝায় না। “আপদবিপদ’ সমষ্টিগত, ওর মধ্যে অনির্দিষ্টভাবে নানাপ্রকার দুৰ্যোগের সম্ভাবনার সংকেত আছে। ‘ধারধোর’ শব্দে ধার করার উপরেও আর কিছু অস্পষ্টভাবে উত্ত্বেত্ত থাকে। হয়তো, কাউকে ধ'রে পড়া। রূপক অর্থে শুধু 'ছাই’ শৰে তুচ্ছতা বোঝায় যথেষ্ট, এই অর্থে 'ছাই’ শব্দের ব্যবহার হয়ে থাকে, যেমন : কী ছাই বকছ । কিন্তু "ছাইভস্ম কী যে বকছ’, এতে প্রলাপের বহর যেন বড়ো করে দেখানো হয় । "হাড়িকুড়ি' শব্দ সংক্ষেপে পাকশালার বহুবিধ আয়োজনের ছবি এনে দেয়। এরকম স্থলে তন্নতর বর্ণনার চেয়ে অস্পষ্ট বর্ণনার প্রভাব বেশি । ‘মামলা-মকদ্দমা’ শব্দটা ব্রিটিশ আদালতের দীর্ঘপ্রলম্বিত বিপত্তির দ্বিপদী প্রতীক । এইজাতীয় শম্বের কতকগুলি নমুনা দেওয়া গেল : মাথামুণ্ডু মালমশলা গোনাগুক্তি চালচলন বাধাছাদা হালিতামাশা বিয়েথাওয়া দেওয়াখোওয়া বেঁটেখাটো পাকাপোক্ত মায়াদয়া ছুটোছাটা কুটোকাটা কাটাখোচা ঘোরাফেরা নাচাকোদা জাকজমক গড়াপেটা জানাশোনা চাষাস্থবো দাবিদাওয়া অদলবদল ছেলেপূলে নাতিপুতি । २२ চলতি বাংলার আর-একটি বিশেষত্ব জানিয়ে দিয়ে এ বই শেষ করি। ধারা সাধু ভাষায় গম্ভলাহিত্যকে রূপ দিয়েছিলেন স্বভাবতই তাদের হাতে বাক্যবিস্তাসের একটা ধারা বাধা হয়েছিল। তার প্রয়োজন নিয়ে তর্ক নেই। আমার বক্তব্য এই যে, এ বাধাবাধি বাংলা চলতি ভাষার নয় । কোথায় গেলেন তোমার দাদা, তোমার দাদা কোথায় গেলেন, গেলেন কোথায় তোমার দাদা, দাদা তোমার গেলেন কোথায়, কোথায় গেলেন দাদা তোমার ; প্রথম