পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8૭૦ রবীন্দ্র-রচনাবলী যখন ফিরিব তখন অবকাশমত অনেক কথা হইবে, এখন বিদায়ের সময় দুই-একটা কথা পরিষ্কার করিয়া যাইতে চাই । আমাকে অনেকেই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন, ‘তুমি যুরোপে ভ্রমণ করিতে যাই কেন । এ কথার কী জবাব দিব ভাবিয়া পাই না। ভ্রমণ করাই ভ্রমণ করিতে যাইবার উন্ধেগু, এমন একটা সরল উত্তর যদি দিই তবে প্রশ্নকর্তারা নিশ্চয় মনে করিবেন, কথাটাকে নিতান্ত হাঙ্কারকম করিয়া উড়াইয়া দিলাম। ফলাফল বিচার করিয়া লাভ-লোকসানের হিসাব না ধরিয়া দিতে পারিলে, মামুহকে ঠাণ্ড করা যায় না । প্রয়োজন না থাকিলে মানুষ অকস্মাৎ কেন বাহিরে যাইবে, এ প্রশ্নটা আমাদের দেশেই সম্ভব। বাহিরে যাইবার ইচ্ছাটাই যে মানুষের স্বভাবলিঙ্ক, এ কথাটা আমরা একেবারে জুলিয়া গিয়াছি । কেবলমাত্র ঘর আমাদিগকে এত বাধনে এমন করিয়া ৰাধিয়াছে, চৌকাঠের বাহিরে পা বাড়াইবার সময় আমাদের এত অধাত্রা, এত অবেলা, এত হাচি টিকৃটিকি, এত অশ্রুপাত যে, বাহির আমাদের পক্ষে অত্যন্তই বাহির হইয়া পড়িয়াছে ; ঘরের সঙ্গে তাহার সম্বন্ধ অত্যন্ত বিচ্ছিন্ন হইয়াছে । আত্মীয়মণ্ডলী আমাদের দেশে এত নীরন্ধ নিবিড় যে, পরের মতো পর আমাদের কাছে আর-কিছুই নাই । এইজন্তই অল্প সময়ের জন্যও বাহির হইতে হইলেও সকলের কাছে আমাদের এত বেশি জবাবদিহি করিতে হয় । বাধা থাকিয়া থাকিয়া আমাদের ডানা এমনি বদ্ধ হইয়া গিয়াছে যে, উড়িবার আনন্দ যে একটা আনন্দ, এ কথাটা আমাদের দেশে বিশ্বাসযোগ্য নহে । অল্প বয়সে যখন বিদেশে গিয়াছিলাম তখন তাহার মধ্যে একটা আর্থিক উদ্বেগু ছিল, সিভিল সার্ভিসে প্রবেশের বা বারিস্টার হওয়ার চেষ্টা একটা ভালো কৈফিয়ত— কিন্তু, বাহান্ন বংসর বয়সে লে কৈফিয়ত খাটে না, এখন কোনো পারমার্থিক উদ্দেশ্বের দোহাই দিতে হুইবে । আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্ত ভ্রমণের প্রয়োজন আছে, এ কথাটা আমাদের দেশের লোকেরা মানিয়া থাকে। সেইজন্ত কেহ কেহ কল্পনা করিতেছেন, এ বয়সে আমার যাত্রার উদ্বেগু তাহাই । এইজন্য র্তাহারা আশ্চর্ষ হইতেছেন, সে উদ্বেগু বুরোপে সাধিত হইবে কী করিয়া। এই ভারতবর্ষের তীর্থে ঘুরিয়া এখানকার সাধু-সাধকদের সঙ্গ লাভ করাই একমাত্র মুক্তির উপায় । আমি গোড়াতেই বলিয়া রাখিতেছি, কেবলমাত্র বাহির হইয়া পড়াই আমার উল্পেগু। ভাগ্যক্রমে পৃথিবীতে আসিয়াছি, পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় যথাসম্ভব সম্পূর্ণ করিয়া যাইব, ইহাই আমার পক্ষে যথেষ্ট। দুইটা চন্থ পাইয়াছি, সেই ট। চন্থ