পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8१९ A রবীন্দ্র-রচনাবলী লণ্ডন-রাজধানীর নীচের অন্ধকার তলায় দারিজ্যের মালিন্ত ও পাপের পঙ্কিলতা উদঘাটিত হইয়া বর্ণিত হইয়াছে। এই চিত্র যতই নিদারুণ হউক, খৃস্টান তাপসের অদ্ভুত ধৈৰ্য বীর্ষ ও করুণাপরায়ণ প্রেম সমস্ত বীভৎসতাকে ছাড়াইয়া উঠিয়া উজ্জল দীপ্তিতে প্রকাশ পাইয়াছে। গীতায় একটি আশার বাণী আছে, স্বল্পপরিমাণ ধর্মও মহৎ ভয় হইতে ত্ৰাণ করে। কোনো সমাজে সেই ধর্মকে যতক্ষণ সজীব দেখা যায় ততক্ষণ সেখানকার ভূরিপরিমাণ দুৰ্গতির অপেক্ষাও তাহাকে বড়ো করিয়া জানিতে হইবে । যুরোপে দুর্বল জাতির প্রতি স্তায়ধর্মের ব্যভিচার দেখা যাইতেছে না এমন নহে, কিন্তু তাহাই একান্ত হইয়া নাই। সেই সঙ্গেই সেই নিষ্ঠুর বলদৃপ্ত লুদ্ধতার মধ্য হইতেই ধিকার ও ভর্ৎসনা উচ্ছ্বলিত হইতেছে। প্রবলের অন্যায়ের প্রতিবাদ করিতে পারেন এবং প্রতিকার করিতে চাহেন এমন সাহসিক বীরও সেখানে অনেক আছেন। দূরবর্তী পরজাতির পক্ষ অবলম্বন করিয়া নির্বাতন লহ করিতে কুষ্ঠিত নহেন, এমন দৃঢ়নিষ্ঠ সাধুব্যক্তির সেখানে অভাব নাই। ভারতবাসীরা স্বদেশের রাজ্যশাসনে প্রশস্ত অধিকার লাভ করেন, সেই চেষ্টায় প্রবৃত্ত গুটিকয়েক ভারতবর্ষীয় আমাদের দেশে আছেন— কিন্তু দীক্ষা তাহারা কাহাদের কাছে পাইয়াছেন এবং যথার্থ সহায় তাহাদের কে যাহারা আত্মীয়দের বিদ্রুপ ও প্রতিকূলতা স্বীকার করিয়া স্বজাতির স্বার্থপরতার ক্ষেত্রকে সংকীর্ণ করিবার জন্ত দেশের লোককে ধর্মের দোহাই দিতেছেন, তাহারা কোন দেশের মানুষ । তাহারা সংখ্যায় অল্প কিন্তু সত্যষ্টিতে দেখিলে দেখা যাইবে, তাহারা সংখ্যায় অল্প নহেন । কেননা, তাহাঁদের মধ্যেই তাহীদের শেষ নহে । দেশের মধ্যে গোচর এবং অগোচর তাহীদের একটি পরম্পরা আছে ; তাহারা সকলেই এক কাজ করিতেছেন বা এক সময়ে আছেন তাহা নহে, কিন্তু তাহারাই সমাজের ভিতরকার ন্যায়শক্তি। র্তাহারাই ক্ষত্রিয় ; পৃথিবীর সমস্ত দুর্বলকে ক্ষয় হইতে ত্ৰাণ করিবার জন্ত র্তাহারা সহজ কবচ ধারণ করিয়াছেন। দুঃখ হইতে মানুষকে উদ্ধার করিবার জন্ত যিনি দুঃখ বহন করিয়াছিলেন, মৃত্যু হইতে মানুষকে অমৃতলোকে লইয়া যাইবার জঙ্ক যিনি মৃত্যু স্বীকার করিয়াছেন, সেই তাহদের স্বৰ্গীয় গুরুর অপমানিত রক্তাক্ত দুর্গম পথে তাহারা সারি সারি চলিয়াছেন । সমস্ত জাতির চিত্তপ্রাস্তরের মাঝখান দিয়া তাহারাই অমৃতমন্দাকিনীর ধারা । আমরা সর্বদাই নিজেকে এই বলিয়া সানা দিয়া থাকি যে, আমরা ধর্মপ্রাণ আধ্যাত্মিক জাতি, বাহিরের বিষয়ে আমাদের মনোযোগ নাই ; এইজন্যই ৰছিৰিয়েই আমরা দুর্বল হইয়াছি। বাহিরের দৈস্ত সম্বন্ধে আমাদের লজ্জাকে এমনি করিয়া আমরা