૪નાર রবীন্দ্র-রচনাবলী পণ । এইজন্ত বাহিরের দিকে তাহারা যেমন কেবলই আহরণ করিতেছে অথচ সন্তোষ নাই বলিয়া কিছুকেই লাভ করিতেছে না, তেমনি তত্ত্বজ্ঞানের দিকেও তাহারা বলিতে আরম্ভ করিয়াছে যে, সত্যের মধ্যে গম্যস্থান বলিয়া কোনো পদার্থই নাই, আছে কেবল গমন। কেবলই হইয়া উঠা, কিন্তু কী যে হুইয়া উঠা তাহার কোনো ঠিকানা কোনোখানেই নাই । ইহা এমন একটি সমূত্রের মতো যাহার কুলও নাই, তলও নাই, আছে কেবল ঢেউ— যাহা পিপাসাও মেটায় না, ফসলও ফলায় না, কেবলই দোলা দেয়। আমরা দেখিলাম আনন্দকে, আর দুঃখকে বলিলাম মিথ্যা মায়া ; উহারা দেখিল দুঃখকে, আর আনন্দকে বলিল মিথ্যা মায়া। কিন্তু, পরিপূর্ণ সত্যের মধ্যে তো কোনোটাই বাদ পড়িতে পারে না ; পূর্ব পশ্চিম সেখানে না মিলিলে পূর্বও মিথ্যা হয় পশ্চিমও মিথ্যা হয়। আনন্দাদ্ধোব খৰিমানি ভূতানি জায়ন্তে- অর্থাৎ আনন্দ হইতেই এই সমস্ত-কিছু জন্মিতেছে— এ কথা যেমন সত্য, ‘স তপোহতপতি’ অর্থাৎ তপস্যা হইতে, দুঃখ হইতেই সমস্ত-কিছু স্থই হইতেছে, এ কথা তেমনি সত্য । গায়কের চিত্তে দেশকালের অতীত গানের পূর্ণ আনন্দও ষেমন সত্য আবার দেশকালের ভিতর দিয়া গান গাছিয়া প্রকাশ করিবার বেদনাও তেমনি সত্য । এই আনন্দ এবং দুঃখ, এই সমাপ্তি ও ব্যাপ্তি, এই চিরপুরাতন এবং চিরনূতন, এই ধনধান্তপূর্ণ ভূমি ও দুঃখাশ্রচঞ্চল সমুদ্র, উভয়কে মিলিত করিয়া স্বীকার করাই সত্যকে স্বীকার করা । এইজন্য দেখিতেছি, যাহারা চরমকে না মানিয়া কেবল বিকাশকেই মানিতেছে তাহারা উন্মত্ত হইয়া উঠিয়া অপঘাতকৃত্যুর অভিমুখে ছুটিতেছে, পদে পদেই তাহাজের জাহাজ কেবল আকস্মিক বিপ্লবের চোরা পাহাড়ের উপর গিয়া ঠেকিতেছে । আর যাহারা বিকাশকে মিথ্যা বলিয়া কেবলমাত্র চরমকেই মানিতে চায়, তাহারা নিবাঁধ ও জীর্ণ হইয়া এক শয্যায় পড়িয়া অভিভূত হইয়া মরিতেছে। কিন্তু, চলিতে চলিতে একদিন ঐ ভাঙার গাড়ি এবং সমূত্রের জাহাজ যখন একই বন্দরে আসিয়া পৌছিবে এবং দুই পক্ষের মধ্যে পণ্যবিনিময় হইৰে তখনি উভয়ে বাচিয়া বাইবে । নহিলে কেবলমাত্র আপনার পণ্য দিয়া কেহ আপনার দারিদ্র্য ঘুচাইতে পারে না ; বিনিময় না করিতে পারিলে বাণিজ্য চলে না এবং বাণিজ্য না চলিলে লক্ষ্মীর দেখা পাওয়া যায় না । এই বাণিজ্যের যোগেই মানুষ পরস্পর মিলিবে বলিয়াই, পৃথিবীতে ঐশ্বৰ দিকে দিকে বিভক্ত হইয়া গিয়াছে। একমা জীবরাজ্যে স্ত্রীপুরুষের বিভাগ ঘটাতেই যেমন দেখিতে দেখিতে বিচিত্র স্থখছুঃখের আকর্ষণের ভিতর দিয়া প্রাণীদের প্রাণসম্পন্ন জাজ আশ্চর্যরূপে উৎকর্ষ লাভ করিয়াছে, তেমনি মাহুষের প্রকৃতিও কেহ বা স্থিতিকে কেহ
