পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ぬミ * রবীন্দ্র-রচনাবলী অবশেষে একদিন বুনো ঘোড়াটার মতোই সমূত্রের ফেনকেশর ধরিয়া মাম্বৰ তাহার পিঠের উপর চড়িয়া বসিল । ক্রুদ্ধ সাগর পিঠ নাড়া দিল ; মানুষ কত ডুবিল, কত মরিল, তাহার সীমা নাই। অবশেষে একদিন মানুষ এই অবাধ্য সাগরকেও আপনার সঙ্গে জুড়িয়া লইল । তাহার এক কুল হইতে আর-এক কুল পর্যন্ত মানুষের পায়ের কাছে আলিয়া মাথা হেঁট করিয়া দিল । বিশাল সমূত্রের সঙ্গে যুক্ত মানুষটা ৰে কিরকম, আজ আমরা জাহাজে চড়িয়া তাহাই অনুভব করিতেছি । আমরা তো এই একটুখানি জীব, তরণীর এক প্রান্তে চুপ করিয়া দাড়াইয়া আছি, কিন্তু দূর দূর বহুদূর পর্যন্ত সমস্ত আমার সঙ্গে মিলিয়াছে। ষে দূরকে আজ রেখামাত্রও দেখিতে পাইতেছি না তাহাকেও আমি এইখানে স্থির দাড়াইয়া অধিকার করিয়া লইয়াছি। যাহা বাধা তাহাই আমাকে পিঠে করিয়া লইয়া অগ্রসর করিয়া দিতেছে। সমস্ত সমুদ্র আমার, যেন আমারই বিরাট শরীর, যেন তাহা আমার প্রসারিত ডানা। যাহা-কিছু আমাদের বাধা তাহাকেই আমাদের চলিবার পথ, আমাদের মুক্তির উপায় করিয়া লইতে হইবে, আমাদের প্রতি ঈশ্বরের এই আদেশ আছে। যাহারা এই আদেশ মানিয়াছে তাছারাই পৃথিবীতে ছাড়া পাইয়াছে। যাহারা মানে নাই এই পৃথিবীটা তাহদের পক্ষে কারাগার। নিজের গ্রামটুকু তাহাদিগকে বেড়িয়াছে, ঘরের কোণটুকু তাহাদিগকে বাধিয়াছে, প্রত্যেক পা ফেলিতেই তাছাদের শিকল ঝম্‌ঝম্ করে । মনের আনন্দে চলিতেছি । ভয় ছিল, সমুদ্রের দোলা আমার শরীরে সহিবে না । সে ভয় কাটিয়া গেছে। যেটুকু নাড়া খাইতেছি তাহাতে আঘাত করিতেছে না, যেন আদর করিতেছে। সমুদ্র আমাকে কোলে করিয়া বহিয়া চলিয়াছে— রুগণ বালককে তাহার পিতা যেমন করিয়া লইয়া যায় তেমনি সাবধানে । এইজন্স এ যাত্রায় এখন পৰম্ভ আমার চলিবার কোনো পীড়া নাই, চলিবার আনন্দই ভোগ করিতেছি । কেবলমাত্র এই চলিবার আনন্দটুকুই পাইব বলিয়া আমি বাছির হইয়াছি। অনেক দিন হইতে এই চলিবার, এই বাহির হইয়া পড়িবার, একটা বেগ আমাকে উতলা করিয়া তুলিতেছিল। অনেক দিন আমাদের আশ্রমের বাড়িতে দোতলার বারান্দায় একলা বসিয়া যখন আমাদের সামনের শালগাছগুলার উপরের আকাশের দিকে তাকাইয়াছি তখন সেই আকাশ দূরের দিকে তাহার তর্জনী বাড়াইয়া দিয়া আমাকে সংকেত করিয়াছে। যদিও সেই আকাশটি নীরব তৰু দেশদেশান্তরের স্বত অপরিচিত গিরিনীঅরণ্যের আহবান কত দিগদিগন্তর হইতে উচ্ছ্বলিত হইয়া উঠিরা এই আকাশের নীলিমাকে পরিপূর্ণ করিয়াছে। নিশৰ আকাশ বছরের সেই সমস্ত মৰ্বরধ্বনি