পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8వెb* রবীন্দ্র-রচনাবলী মাহবই বলিল, “যাহা পাওয়া গেছে তাহার চেয়ে আরও পাওয়া চাই।' এই-বে আরো’র দিকে সে পা বাড়াইল এ বড়ো বিষম রাজ্য। এখানে স্বাভাবিক পরিতৃপ্তির কোনো সীমা কোথাও নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া নাই, এইজন্ত কোন দিকে কত দূর পর্যন্ত ষে যাওয়া যায় তাহার পরামর্শদাতা পাওয়া শক্ত । এইজন্ত এই অতৃপ্তির পথহীন রাজ্যে মরিবার আশঙ্কা চারি দিকেই বিকীর্ণ। এমন ভয়ানক ক্ষেত্রে মানুষকে দুৰ্নিবার বেগে ষে টানিয়া আনিল মানুষ তাহাকে গালি দিয়া বলিল "শয়তান’ । কিন্তু, রাগই করি আর যাই করি, জগতে শয়তানকে তো মানিতে পারি না। এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে, মানুষের এই-যে ইচ্ছার উপরে আরো'র জন্ত আরও একটা ইচ্ছা ইহা তাহার বাহিরের দিক হইতে একটা শক্রর আক্রমণ নহে। ইহাকে মানুষ রিপু বলে বলুক, কিন্তু এই ইচ্ছাই তাহার যথার্থ মানবস্বভাবগত ইচ্ছা। স্বতরাং যতক্ষণ এই ইচ্ছাকে সে জয়ী করিতে না পরিবে ততক্ষণ তাহার কিছুতেই শান্তি নাই– ততক্ষণ তাহাকে কেবলই আঘাত খাইয়া খাইয়া ঘুরিয়া মরিতে হইবে। কিন্তু, এই আরো’র ইচ্ছাকে লে জয়ী করিবে কেমন করিয়া । আহার করিলে পেট তাহার ভবিবেই, ভোগ করিলে এক জায়গায় তাহার নিবৃত্তিতে আসিয়া ঠেকিতেই হইবে— আরো’র ইচ্ছাকে সেখানে কোনো-একটা সীমায় আসিয়া হার মানিতেই হইবে। শুধু হার মানা নয়, সে জায়গায় সে দুঃখ পাইবে এবং দুঃখ ঘটাইবে । ব্যাধি আসিবে, বিকৃতি আসিবে, সে নিজেকে এবং অন্তকে বাধা দিতে থাকিবে । কেননা, প্রকৃতি যেখানে সীমা টানিয়াছেন তাহাকে লঙ্ঘন করিতে গেলেই শাস্তি আছে । শুধু তাই নয়। প্রকৃতির সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রে আমাদের এই আরো'র ইচ্ছাকে দৌড় করাইতে গেলেই পরস্পরের ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়িতে হয়। যেটুকু আমার আছে তাহার চেয়ে বেশি লইতে গেলেই যেটুকু তোমার আছে তাহার উপর হাত দিতে হয়। তখন, হয় গোপনে ছলনা নয় প্রকাতে গায়ের জোর আশ্রয় করিতে হয়। তখন ছৰ্বলের মিথ্যাচার ও প্রবলের দৌরাত্ম্যে সমাজ লগুভণ্ড হইতে থাকে। এমনি করিয়াই পাপ আসে, বিনাশ আসে । কিন্তু, এই পাপ যদি না আলিত তবে মানুষ পথ দেখিতে পাইত না । এই আরো'র অতৃপ্তি যেখানে তাহাকে টানিয়া লইয়া যায় সেখানে যদি পাপের আগুন জলে, তবে ঘোড়াটাকে কোনোমতে বাগ মানাইয়া ফিরাইয়া জানিবার কথা মনে আসে । এইজস্ত মন্থগুলোকে অস্তান্ত সকল শিক্ষার উপরে সেই সাধনাটা প্রচলিত যাহাতে ঐ আরো’র ইচ্ছাটাকে বশে জানা যায়। কেননা, মানুষকে ঈশ্বর ঐ একটা ভয়ংকর বাহন দিয়াছেন, ও আমাদের কোথায় লইয়া গিয়া যে ফেলে তাহার ঠিকানা নাই। উহার মুখে লাগাম পরাও, উহাকে গলাইতে