রবীন্দ্র-রচনাবলী هذه এই-ষে উদ্যত শক্তি, যাহার এক দিকে ক্রীড়া ও অন্ত দিকে কর্ম, ইহাই যথার্থ স্বন্দর। রমণীর মধ্যে যেখানে আমরা লক্ষ্মীর প্রকাশ দেখিতে পাই সেখানে আমরা এক দিকে দেখি সাজসজা লীলামাধুর্য, আর-এক দিকে দেখি অক্লাস্ত কর্মপরতা ও সেবানৈপুণ্য। এই উভয়ের বিচ্ছেদই কুই। বস্তুত, শক্তিই সৌন্দর্যরূপে আপনাকে প্রকাশ করে, আর শক্তিহীনতাই শৈথিল্য ও অব্যবস্থার মধ্য দিয়া কেবলই কদৰ্ধতার পঙ্কের মধ্যে আপনাকে নিমগ্ন করে । কদৰ্যতাই মামুষের শক্তির পরাভব ; এইখানেই অস্বাস্থ্য, দারিদ্র্য, অন্ধ সংস্কার ; এইখানেই মাহুষ বলে, “আমি হাল ছাড়িয়া দিলাম, এখন অদৃষ্টে যাহা করে । এইখানেই পরম্পরে কেবল বিচ্ছেদ ঘটে, আরন্ধ কর্ম শেষ হয় না, এবং যাহাই গড়িয়া তুলিতে চাই তাহাই বিশ্লিষ্ট হইয়া পড়ে। শক্তিহীনতাই যথার্থ শ্রীহীনতা । আমি জাহাজের ডেকের উপরে ইহাঙ্গের প্রচুর আমোদ-আহ্লাদের মধ্যেও ইহাই দেখিতে পাই। ইহাদের সমস্ত খেলাধুলার ভিতরে ভিতরে স্বভাবতই একটি বিধান দেখা দেয়। এইজন্ত ইহাদের আমোদ-প্রমোদও কোনোমতে বিশৃঙ্খল হইয়া উঠে না। যথাসময়ে যথাবিহিত ভদ্রবেশ প্রত্যেককেই পরিয়া আসিতে হয়। পরম্পরের সঙ্গে আলাপ-পরিচয়ের ভিতরে ভিতরে নিয়ম প্রচ্ছন্ন আছে ; সেই নিয়মের সীমা লঙ্ঘন করিবার জো নাই । বিধানের উপরে নির্ভর করিয়া থাকে বলিয়াই ইহাদের আমোদআহলাদ এমন উচ্ছ্বলিত প্রবল বেগে বিপত্তি বঁাচাইয়া প্রবাহিত হইতে পারে। এই ডেকের উপরে আর কেহ নহে, কেবল আমাদের দেশের লোকে মিলিত হইয়াছে, সে দৃপ্ত আমি মনে মনে কল্পনা না করিয়া থাকিতে পারি না। প্রথমেই দেখা যাইত, কোনো একই ব্যবস্থা দুইজনের মধ্যে থাটিত না । আমাদের অভ্যাস ও আচরণ পরস্পরের সঙ্গে আপনার মিল করিতে জানে না। যুরোপীয়দের মধ্যে একটা জায়গা আছে যেখানে ইহারা স্বতন্ত্র, আর-একটা জায়গা আছে যেখানে ইহারা সকলের। যেখানে ইহারা স্বতন্ত্র সে জায়গাটা ইহাদের প্রাইভেট । সেখানটা প্রচ্ছন্ন। সেখানে সকলের অবারিত অধিকার নাই এবং সেই অনধিকারকে সকলেই সহজেই মানিয়া চলে। সেখানে তাহারা নিজের ইচ্ছা ও অভ্যাস অনুসারে আপনার ব্যক্তিগত জীবন বহন করে। কিন্তু, যখনই সেখান হইতে তাহারা বাছির হইয়া আগে তখনই সকলের বিধানের মধ্যে ধরা দেয়— সে জায়গায় কোনোমতেই তাহারা আপনার প্রাইভেটুকে টানিয়া আনে না। এই দুই বিভাগ স্বম্প থাকাতেই পরস্পর মেলামেশা ইহাদের পক্ষে এত সহজ ও স্বপূখল। আমাদের মধ্যে এই বিভাগ নাই বলিয়া সমস্ত এলোমেলো হইয়া যায়, কেহ কোনোখানে সীমা মানিতে চায় না। আমরা এই ডেক পাইলে নিজের
