পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

હર8 , রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহা খাপছাড়া নহে। যাহারা সরল চক্ষে দেখিয়াছে সকলেই এমনি করিয়া দেখিয়াছে। বৈদিক কবিরাও জলে স্থলে প্রাণকে দেখিয়াছেন, হৃদয়কে দেখিয়াছেন। নদী মেম্ব উষা অগ্নি ঝড়, বৈজ্ঞানিক সত্যরূপে নহে, ইচ্ছাময় মূর্তিরূপে তাহদের কাছে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে। মানুষের জীবনের মধ্যে স্থখদু:খের যে অভিজ্ঞতা প্রকাশ । পায় তাহাই যেন নানা অপরূপ ছদ্মবেশে ভূলোকে ও ছালোকে আপন লীলা বিস্তার কৱিৰাছে। যেমন আমাদের চিত্তে তেমনি সমস্ত প্রকৃতিতে। হালিকায়ার বেদন, চাওয়া পাওয়া এবং হারানোর খেলা, যেমন আমাদের এই ছোটো হৃদয়টিতে তেমনি তাহাই খুব প্রকাও করিয়া এই মহাকাশের আলোক-অন্ধকারের রঙ্গমঞ্চে । তাহা এত বৃহৎ ষে তাহাকে আমরা একসঙ্গে দেখিতে পাই না বলিয়া আমরা জল দেখি, মাটি দেখি, কিন্তু সমস্তটার ভিতরকার বিপুল খেলাটাকে.দেখিতে পাই না। কিন্তু, মানুষ যখন শিক্ষা ও অভ্যাসের ঠুলির ভিতর দিয়া দেখে না, যখন সে আপনার সমস্ত হৃদয় মন জীবন দিয়া দেখে, তখন সে এমন একটা বেদনার লীলাকে সব জায়গাতেই অনুভব করে যে, তাহাকে গল্পের মধ্য দিয়া, রূপকের মধ্য দিয়া ছাড়া প্রকাশ করিতে পারে না। মানুষ যখন জাগতিক ব্যাপারের মধ্যে আপনারই খুব একটা বড়ো পরিচয় পাইতেছিল— এইটে একরকম করিয়া বুঝিতেছিল যে, সমস্ত জগতের মধ্যে যাহা নাই তাহা তাহার নিজের মধ্যেও নাই, বাহা তাহার মধ্যে আছে তাহাই বিপুল আকারে বিশ্বের মধ্যে আছে— তখনি সে কবির দৃষ্টি অর্থাৎ হৃদয়ের কৃষ্ট জীবনের দৃষ্টিতে সমস্তকে দেখিতে পাইয়াছিল ; তাহা অক্ষিগোলক ও স্বায়ুশিরা ও মস্তিষ্কের দৃষ্টি নহে । তাহার সত্যতা তথ্যগত নহে ; তাহা ভাবগত, বেদনাগত । তাছার ভাষাও সেইরূপ ; তাহা স্বরের ভাষা, রূপের ভাষা । এই ভাষাই মানবসাহিত্যে সকলের চেয়ে পুরাতন ভাষা। অথচ, আজও যখন কোনো কৰি বিশ্বকে আপনার বেদনা দিয়া অনুভব করেন তখন তাহার ভাষার সঙ্গে মাহুষের পুরাতন ভাষার মিল পাওয়া যায়। এই কারণে বৈজ্ঞানিক যুগে মানুষের পৌরাণিক কাহিনী আর-কোনো কাজে লাগে না ; কেবল কবির ব্যবহারের পক্ষে তাহ পুরাতন হইল না। মানুষের নবীন বিশ্বাস্থস্কৃতি ঐ কাহিনীর পথ দিয়া জানাগোনা করিয়া ঐখানে আপন চিহ্ন রাখিয়া গিয়াছে । অনুভূতির সেই নবীনতা বাহার চিত্তকে উজবোধিত করে সে ঐ পুরাতন পথটাকে স্বভাবতই ব্যবহার করিতে প্রবৃত্ত হয় । কৰি য়েট্স্ আয়র্লণ্ডের সেই পৌরাণিক পৰ দিয়া নিজের কাব্যধারাকে প্রবাহিত করিয়াছেন। ইহা তাহার পক্ষে সম্পূর্ণ স্বাভাৰিক হইয়াছিল বলিয়াই এই পথে তিনি এমন অসামান্ত খ্যাতি উপার্জন করিতে পারিয়াছেন। তিনি তাহার জীবনের স্বারা