পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের সঞ্চয় - * * &*S আমার কোনোকালেই নাই ; অতএব ইংরেজি রচনায় বাহবা লইবার প্রতি আমার লক্ষ্য ছিল না। কিন্তু, নিজের আবেগকে বিদেশী ভাষার মুখ হইতে আবার একটুখানি মূৰ্ত্তন করিয়া গ্রহণ করিবার ষে স্বখ তাহা আমাকে পাইয়া বসিয়াছিল। আমি আরএক বেশ পরাইয়া নিজের হৃদয়ের পরিচয় লইতেছিলাম। 點 আমি বিলাতে আসার পর এই তর্জমাগুলি যখন আমার বন্ধুর হাতে পড়িল, তিনি বিশেষ সমাদর করিয়া সেগুলি গ্রহণ করিলেন। এবং তাহার কয়েক খও কপি করাইয়া এখানকার কয়েকজন সাহিত্যিককে পড়িতে দিলেন । আমার এই বিদেশী হাতের ইংরেজিতে আমার এই লেখাগুলি তাঁহাদের ভালো লাগিয়াছে। বোধ হয় তাহার একটা কারণ এই যে, ইংরেজি রচনার শক্তি আমার এতটা প্রবল নহে যাহাতে আমার তর্জমা হইতে বিদেশী রসটুকুকে আমি একেবারে নিঃশেষে নষ্ট করিয়া ফেলিতে পারি। স্টপ ফোর্ড, ক্রকের হাতে আমার এই তর্জমাগুলির একটি কপি পড়িয়াছিল। সেই উপলক্ষ্যে তিনি একদিন আমাকে ডিনারের নিমন্ত্ৰণ করিয়াছিলেন। তিনি বৃদ্ধ, বোধ করি তাহার বয়স সত্তর বছর পার হইয়া গিয়াছে। তাহার একটা পায়ের রক্তপ্রণালীতে প্রদাহের মতো হইয়াছে, চলা তাহার পক্ষে কষ্টকর ; সেই পা একটা চৌকির উপর তিনি তুলিয়া বসিয়া আছেন। বাৰ্ধক্য কোনো কোনো মানুষকে পরাভূত করিয়া পদানত করে, আবার কোনো কোনো মামুষের সঙ্গে সন্ধিস্থাপন করিয়া তাহার সঙ্গে বন্ধুর মতো বাস করে। ইহার শরীরমনে বাৰ্ধক্য তাহার জয়পতাকা তুলিতে পারে নাই । আশ্চর্ষ ইহার নবীনতা । আমার বার বার মনে হইতে লাগিল, বৃদ্ধের মধ্যে যখন যৌবনকে দেখা যায় তখনি তাছাকে সকলের চেয়ে ভালো করিয়া দেখা যায়। কেননা, সেই যৌবনই সত্যকার জিনিস ; তাহা শরীরের রক্তমাংসের সহিত জীর্ণ হইতে জানে না ; তাহা রোগতাপকে আপনার জোরেই উপেক্ষা করিতে পারে। র্তাহার দেহের আয়তন বিপুল, তাহার মুখত্ৰ স্বন্দর ; কেবল তাহার পীড়িত পায়ের দিকে তাকাইয়া মনে হইল, অৰ্জুন যখন স্রোণাচার্ধের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন তখন প্রণামনিবেদনের স্বরূপ প্রথম তীর তাহার পায়ের তলায় ফেলিয়াছিলেন, তেমনি বাৰ্ধক্য তাহার যুদ্ধ-জারভের প্রথম তীরটা ইহার পায়ের কাছে নিক্ষেপ করিয়াছে। বিধাতা যে জীবনটা ইহাকে দান করিয়াছেন সেটাকে সকল দিক হইতে আনন্দের সামগ্ৰী করিয়া দিয়াছেন ; ছবি কবিতা, প্রকৃতির সৌন্দৰ, এবং লোকালয়ে মানবজীবনের বিচিত্ৰ লীলা, সকলের প্রতিই তাহার চিত্তের ঔৎস্থক্য প্রবল। চারি দিকের জগতের এই স্পৰ্শাস্থস্থতি, এই রসগ্রহণের শক্তি তাহার বম্বোবৃদ্ধির সঙ্গে কমিয়া আলে নাই। এই গ্রহণের শক্তিই তো যৌবন। o