পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©©Ꮼ রবীক্স-রচনাবলী করিয়াছে এবং ধন ও ক্ষমতার পার্থক্য যে অভিমানকে স্বষ্টি করে জাতিভেদের বেড়ার দ্বারা তাহান্ন সংঘাতকে সে ঠেকাইয়াছে। এক দিকে যদিও ভারতবর্ষ সমাজের নেতা ব্ৰাহ্মণদের সহিত অন্ত বর্ণের স্বাতন্ত্র্যকে সর্বপ্রকার উপায়ে অভ্ৰভেদী করিয়া তুলিয়াছে, অন্ত দিকে তেমনি সমস্ত মুখস্থবিধা-শিক্ষাদীক্ষাকে সর্বসাধারণের মধ্যে সঞ্চারিত করিয়া দিবার জন্ত নানাবিধ ছোটোবড়ো প্রণালী বিস্তাৱিত করিয়া দিয়াছে। এইজন্ত ভারতবর্ষে ধনী বাহা ভোগ করে নানা উপলক্ষ্যে সর্বসাধারণে তাহার অংশ পায় এবং জনসাধারণকে আশ্রয় দিয়া ও পরিতুষ্ট করিয়াই ক্ষমতাশালীর ক্ষমতা খ্যাতিলাভ করে। জামাদের দেশে ধনী-দরিত্রের প্রচণ্ড সংঘাতের কোনো কারণ নাই, এবং অক্ষমকে আইনের দ্বারা বাচাইয়া রাখিবারও বিশেষ প্রয়োজন ঘটে নাই। পাশ্চাত্যসমাজ পারিবারিক সমাজ নহে ; তাহা জনসমাজ, তাহা আমাদের সমাজের চেয়ে ব্যাপ্ত। ঘরের মধ্যে ততটা পরিমাণে সে নাই যতটা পরিমাণে সে বাহিরে আছে । আমাদের দেশে পরিবার বলিতে যে জিনিস বোঝায় তাহা যুরোপে বাধে নাই বলিয়াই যুরোপের মামুষ ছড়াইয়া পড়িয়াছে। এই ছড়াইয়া-পড়া সমাজের স্বভাবই এই— এক দিকে তাহার বাধন যেমন আলগা আর-এক দিকে তাহা তেমনি বিচিত্র ও দৃঢ় হইয়া পড়ে। তাহা গদ্যরচনার মতো । পষ্ঠ ছন্দের সংকীর্ণ সীমার মধ্যে বদ্ধ হইয়া চলে বলিয়া তাহার বাধনটি সহজ ; কিন্তু গদ্য ছড়াইয়া পড়িয়াছে, এইজন্তই এক দিকে সে স্বাধীন বটে আর এক দিকে তাহার পদক্ষেপ যুক্তির দ্বারা, চিন্তাবিকাশের বিচিত্র নিয়মের দ্বারা, বড়ো করিয়া বাধা। ইংরেজি সমাজ বিস্তৃত ক্ষেত্রে আছে বলিয়া এবং তাহার সমস্ত কারবারকে বাছিয়ে প্রসারিত করিয়া ফাদিতে হইয়াছে বলিয়াই, নানা সামাজিক বিধানের দ্বারা তাহাকে সকল সময়েই প্রস্তুত থাকিতে হইয়াছে । আটপৌরে কাপড় পরিবার সময় তাহার অল্প। তাহাকে সাজিয়া থাকিতে হয়, কেননা সে আত্মীয়সমাজে নাই । জাৰীয়েরা ক্ষমা করে, সহ করে, কিন্তু বাহিরের লোকের কাছে প্রশ্ৰয় প্রত্যাশা করা যায় না। প্রত্যেককে প্রত্যেক কাজে ঠিক সময়মত চলিতেই হয়, নহিলে পরস্পর পরম্পরের ঘাড়ে আসিয়া পড়িবে। রেলের লাইন যদি আমার একলার হয় অথবা আমার গুটিকয়েক ভাইবন্ধুর অধিকারে থাকে, তাহা হইলে যেমন খুশি গাড়ি চালাইতে পারি এবং পরম্পরের গাড়িকে ইচ্ছামত যেখানে-সেখানে যখন-তখন দাড় করাইয়া রাখিতে পারি। কিন্তু, সাধারণের রেলের রাস্তায় যেখানে বিস্তর গাড়ির জানাগোনা সেখানে পাঁচ মিনিট সময়ের ব্যতিক্রম হইলেই নানা দিকে গোল বাধিয়া যায় এবং তাছা সহ করা শক্ত হয়। আমাদের অত্যন্ত ঘোরো সমাজ বলিয়াই অথবা সেই ঘোরে অভ্যাস