পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆ• রবীন্দ্র-রচনাবলী বস্তুত, এখানকার সবচেয়ে বড়ো বীরত্ব বড়ো মহত্ব এখানকার সমাজের ক্ষেত্রে, যুদ্ধক্ষেত্রে নহে। প্রশস্ত সমাজের উপযোগী ত্যাগ এবং আত্মসন্মান এখানে পদে পদে প্রকাশ পাইতেছে ; এইখানে ইহারা মানুষ হইতেছে, এবং নানা পথে মানুষের কাজে আপনাকে দান করিবার জন্ত ইহারা প্রস্তুত হইয়া উঠিতেছে । আধুনিক ভারতবর্ষের শিক্ষিত ভদ্রসম্প্রদায় নিজের দেশেও স্কুলের শিক্ষাকেই শিক্ষণ বলিয়া গণ্য করে— বৃহৎ সমাজের শিক্ষা হইতে বঞ্চিত ; এখানেও আসিয়া যদি তাহারা স্কুলের কারখানার মধ্যে প্রবেশ করিয়া কেবলমাত্র কলের সামগ্ৰী হইয়া বাহির হইয়া যায়, এখানকার সমাজে প্রত্যক্ষ মকুন্তত্বের জন্মস্থানে প্রবেশ না করে, তবে বিদেশে জালিয়াও বঞ্চিত হইবে । সীমার সার্থকতা এ কথা মাঝে মাঝে শুনিয়াছি যে, কবিত্বের মধ্যে জীবনের সম্পূর্ণ সার্থকতা নাই। ঈশ্বরের সাধনাকে কাব্যালংকারের ক্ষেত্র হইতে লংসারে কর্মের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত্ত না করিলে তাহা সত্যের দৃঢ়তা লাভ করে না। মাঝে মাঝে অবসাদের দিনে নিজেও এ কথা ভাবিয়াছি । কিন্তু আমি জানি, এরূপ চিন্তা মনের মধ্যে মরীচিকা-বিস্তার মাত্র । মাহুষের যে রিপু, তাহার কানে মিথ্যামন্ত্র জপ করে, লোভ তাহার মধ্যে অগ্রগণ্য । সে মাহুবকে এই কথা বলে, ‘তুমি যাহা তাহার মধ্যে সত্য নাই, তাহার বাহিরেই সত্য।’ কিন্তু, উপনিষৎ বলিয়াছেন : মা গৃধ কস্তস্বিদ্ধনম্। কাহারও ধনে লোভ করিয়ো না। অর্থাৎ, তোমার সীমার বাহিরে যাহা আছে তাহার পশ্চাতে চিত্তকে ও চেষ্টাকে ধাবিত করিয়ো না । কেন করিব না ওই শ্লোকে সে কথাটাও বলা আছে। উপনিষৎ বলিতেছেন, তিনিই সমস্তকে আচ্ছন্ন করিয়া আছেন ; অতএব, যাহার মধ্যে তিনি আছেন, যাহা তাহার দান, তাহার মধ্যে কোনো অভাবই নাই । নিজের মধ্যে যখন ঐশ্বৰ্ষকে উপলব্ধি করি না তখনি মনে করি, ঐশ্বৰ্ষ পরের মধ্যেই আছে। কিন্তু, যে দীনতাবশত ঐশ্বৰকে নিজের মধ্যে পাই নাই সেই দীনতাৰশতই তাহাকে অস্তজ পাইবার আশা নাই । A. সীমা আছে এ কথা যেমন নিশ্চিত, অসীম আছেন এ কথা তেমনি সত্য। জামরা উভয়কে যখন বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখি তখনি আমরা মায়ার গঙ্গে পড়ি। তখনি আমরা