পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের সঞ্চয় *r ¢ፃፃ এ কথা মনে উদয় হইতে পারে, তবে আর আমাদের আশা কোথায়। কারণ, জীবনের চালনাক্ষেত্র তো সম্পূর্ণ আমাদের হাতে নাই ; পরাধীন জাতির কাছে তো শক্তির দ্বার খোলা থাকিতে পারে না । এ কথা সত্য হইলেও সম্পূর্ণ সত্য নহে। বস্তুত, শক্তির ক্ষেত্র সকল জাতির পক্ষেই কোনো না কোনো দিকে সীমাবদ্ধ। সর্বত্রই অন্তরপ্রকৃতি এবং বাহিরের অবস্থা উভয়ে মিলিয়া আপোযে আপনার ক্ষেত্রকে নির্দিষ্ট করিয়া লয়। এই সীমানিৰ্দিষ্ট ক্ষেত্রই সকলের পক্ষে দরকারি ; কারণ, শক্তিকে বিক্ষিপ্ত করা শক্তিকে ব্যবহার করা নহে । কোনো দেশেই অমুকুল অবস্থা মানুষকে অবারিত স্বাধীনতা দেয় না, কারণ তাহা ব্যর্থতা। ভাগ্য আমাদিগকে যাহা দেয় তাহা ভাগ করিয়াই দেয়—এক দিকে যাহার ভাগে বেশি পড়ে অন্ত দিকে তাহার কিছু না কিছু কম পড়িবেই। অতএব, কী পাইলাম সেটা মানুষের পক্ষে তত বড়ো কথা নয়, সেটাকে কেমন ভাবে গ্রহণ ও ব্যবহার করিব সেইটে যত বড়ো । সামাজিক বা মানসিক যে-কোনো ব্যবস্থায় সেই গ্রহণের শক্তিকে বাধা দেয়, সেই ব্যবহারের শক্তিকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে, তাহাই সর্বনাশের মূল। মাহুষ যেখানে কোনো জিনিসকেই পরখ করিয়া লইতে দেয় না, ছোটো বড়ো সকল জিনিসকেই বাধা বিশ্বাসের সহিত গ্রহণ করিতে ও বাধা নিয়মের দ্বারা ব্যবহার করিতে বলে, সেখানে অবস্থা যতই অমুকুল হউক-না কেন মচুন্যত্বকে শীর্ণ হইতেই হইবে। আমাদের অবস্থার সংকীর্ণতা লইয়া আমরা আক্ষেপ করিয়া থাকি, কিন্তু আমাদের অবস্থা যে যথার্থত: কী তাহা আমরা জানিই না ; তাহাকে আমরা সকল দিকে পরখ করিয়া দেখি নাই, সেই পরখ করিয়া দেখিবার প্রবৃত্তিকেই আমরা অপরাধ বলিয়া সর্বাগ্রে দড়িদড়া দিয়া বাধিয়াছি ; মানবপ্রকৃতির উপর ভরসা নাই বলিয়া এ কথা একেবারে ভুলিয়া বলিয়াছি যে, মাহুষকে ভুল করিতে না দিলে মানুষকে শিক্ষা করিতে দেওয়া হয় না । মান্ধবকে সাহল করিয়া ভালো হইয়া উঠিবার প্রশস্ত অধিকার দিব না, তাহাকে সনাতন নিয়মে সকল দিকেই খর্ব করিয়া ভালোমামুখির জেলখানায় চিরজীবন কারাদণ্ড বিধান করিয়া রাখিব, এমনতরো যাহাদের ব্যবস্থা, তাহারা যতক্ষণ নিজের বেড়ি নিজে খুলিয়া না ফেলিবে এবং বেড়িটাকেই নিজের হাত পায়ের চেয়ে পবিত্র ও পরম ধন বলিয়া পূজা করা পরিত্যাগ না করিবে, ততক্ষণ ভাগ্যবিধাতার কোনো বদস্তিতায় তাহাদের কোনো স্থায়ী উপকার হইতে পারিবে না। n {ኑ নিজের অবস্থাকে নিজের শক্তির চেয়ে শ্রবল বলিয়া গণ্য করিবার মতো দীনতা জার-কিছু নাই। মাছষের আকাজার বেগকে তাছার ব্যক্তিগত স্বাধ, ব্যক্তিগত ভোগ,