পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছেলেবেলা 噶 to 4ఏ4 সেই তোশাখানার দক্ষিণ ভাগে বড়ো একটা ঘরে কাচের সেজে রেড়ির তেলে আলো জলছে মিট মিট করে, গণেশমার্কা ছবি আর কালীমায়ের পট রয়েছে দেয়ালে, তারই আশেপাশে টিকটিকি রয়েছে পোক-শিকারে। ঘরে কোনো আসবাব নেই, মেজের উপরে একখানা ময়লা মাছুর পাতা । - জানিয়ে রাখি আমাদের চাল ছিল গরিবের মতো । গাড়িঘোড়ার বালাই ছিল না বললেই হয়। বাইরে কোণের দিকে তেঁতুল গাছের তলায় ছিল চালাঘরে একটা পালকিগাড়ি আর একটা বুড়ো ঘোড়া। পরনের কাপড় ছিল নেহাত সাদাসিধে। অনেক সময় লেগেছিল পায়ে মোজা উঠতে। যখন ব্রজেশ্বরের ফর্দ এড়িয়ে জলপানে বরাদ্দ হল পাউরুটি আর কলাপাতা-মোড়া মাখন, মনে হল আকাশ যেন হাতে নাগাল পাওয়া গেল। সাবেক কালের বড়োমটুিষির ভগ্নদশা সহজেই মেনে নেবার তালিম চলছিল । ካ আমাদের এই মাদুর-পাতা আসরে যে চাকরটি ছিল সর্দার তার নাম ব্ৰজেশ্বর । চুলে গোফে লোকটা কাচাপাকা, মুখের উপর টানপড়া শুকনো চামড়া, গম্ভীর মেজাজ, কড়া গলা, চিবিয়ে চিবিয়ে কথা। তার পূর্ব মনিব ছিলেন লক্ষ্মীমন্ত, নামডাকওয়ালা । সেখান থেকে তাকে নাবতে হয়েছে আমাদের মতো হেলায়-মানুষ ছেলেদের খবরদারির কাজে । শুনেছি গ্রামের পাঠশালায় সে গুরুগিরি করেছে। এই গুরুমশায়ি ভাষা আর চাল ছিল তার শেষ পর্যন্ত । বাবুরা বলে আছেন না বলে সে বলত ‘অপেক্ষা করে আছেন । শুনে মনিবরা হাসাহালি করতেন। যেমন ছিল তার গুমোর তেমনি ছিল তার শুচিবাই । স্বানের সময় সে পুকুরে নেমে উপরকার তেলভালা জল দুই হাত দিয়ে পাচ-সাতবার ঠেলে দিয়ে একেবারে ঝুপ করে দিত ডুব। স্বানের পর পুকুর থেকে উঠে বাগানের রাস্তা দিয়ে ব্রজেশ্বর এমন ভঙ্গীতে হাত বাকিয়ে চলত যেন কোনোমতে বিধাতার এই নোংরা পৃথিবীটাকে পাশ কাটিয়ে চলতে পারলেই তার জাত বঁাচে । চাল চলনে কোনটা ঠিক, কোনটা ঠিক নয়, এ নিয়ে খুব ঝোক দিয়ে লে কথা কইত। এ দিকে তার ঘাড়টা ছিল কিছু বাক, তাতে তার কথার মান বাড়ত। কিন্তু ওরই মধ্যে একটা খুঁত ছিল গুরুগিরিতে। ভিতরে ভিতরে তার জাহারের লোভটা ছিল চাপা। আমাদের পাতে আগে থাকতে ঠিকমত ভাগে খাবার সাজিয়ে রাখা তার নিয়ম ছিল না। আমরা খেতে বললে একটি একটি করে লুচি জালগোছে জুলিয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করত, ‘জার দেৰ কি " কোন উত্তর তার মনের মতো সেটা বোঝা যেত তার গলার স্বরে। আমি প্রায়ই বলতুম, চাই নে " তার পরে জার সে পীড়াপীড়ি করত না। ছধের বাটিটার পরেও তার অসামাল রকমের টান