পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুক্তির উপায় * Q96: ঐ মূখ কামিনীগুলোই পায়ের ধুলো নিয়ে পায়ে কাঞ্চন যদি না ঢালত তা হলে তোমার গুরুজির পেট_আত মোটা হত না। একটা খবর তোমাকে দিয়ে রাখি। এ বাড়ি থেকে একটা মায়া তোমার কাটবে। কাঞ্চনের বঁাধন খসল তোমার। শ্বশুরমশায় আমাকে দিব্যি গালিয়ে নিয়েছেন, আমার মালহারা থেকে তোমাকে এক পয়সাও আর দিতে পারব না । পুষ্পর প্রবেশ পুপ। ফকিরদা! মানে কী। তোমার শোবার ঘর থেকে পাওয়া গেল মাওক্যোপনিষৎ ! অনিদ্রার পাচন না কি ! ফকির । ( ঈবং হেসে ) তোমরা কী বুঝবে— মেয়েমানুষ ! পুপ। কৃপা করে বুঝিয়ে দিতে দোষ কী ! [ ফকির হান্তমুখে নীরব হৈম। কী জানি ভাই, ওখানা উনি বালিশের নীচে রেখে রাত্তিরে ঘুমোন। পুপ। বেদমন্ত্রগুলোকে তলিয়ে দেন ঘুমের তলায় । এ বই পড়তে গেলে যে তোমাকে ফিরে যেতে হবে সাতজন্ম পূর্বে। ফকির । গুরুকৃপায় আমাকে পড়তে হয় না । পুপ। ঘুমিয়ে পড়তে হয়। ফকির। এই পুথি হাতে তুলে নিয়ে তিনি এর পাতায় পাতায় ফু দিয়ে দিয়েছেন, জলে উঠেছে এর আলো, মলাট ফুড়ে জ্যোতি বেরতে থাকে অক্ষরের ফঁাকে ফঁাকে, ঢুকতে থাকে স্বযুম্বা নাড়ির পাকে পাকে। , পুষ্প । সেজন্তে ঘুমের দরকার ? ফকির। খুবই। আমি স্বয়ং দেখেছি গুরুজিকে, দুপুরবেলা আহারের পর ভগবদগীতা পেটের উপর নিয়ে চিৎ হয়ে পড়ে আছেন বিছানায়— গভীর নিদ্রা । বারণ করে দিয়েছেন সাধনায় ব্যাঘাত করতে। তিনি বলেন, ইড়াপিঙ্গলার মধ্য দিয়ে শ্লোকগুলো অন্তরাত্মায় প্রবেশ করতে থাকে, তার আওয়াজ স্পষ্ট শোনা যায়। অবিশ্বাসীরা বলে, নাক ডাকে। তিনি হাসেন ; বলেন, মূঢ়দের নাক ডাকে, ইড়াপিঙ্গলা ডাকে জ্ঞানীদের– নাসারন্ধ আর ব্রহ্মরন্ধ ঠিক এক রাস্তায়, যেন চিৎপুর আর চৌরঙ্গী। পুপ। ভাই হৈমি, ফকিরদার ইড়াপিজলা আজকাল কী রকম আওয়াজ দিচ্ছে। হৈম। খুব জোরে। মনে হয়, পেটের মধ্যে তিনটে চারটে ব্যাঙ মরীয়া হয়ে উঠেছে । ফকির। ঐ দেখো, শুনলে পুপদিদি ? আশ্চৰ ব্যাপার! সত্যি কথা না জেনেই