পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉めbr রবীন্দ্র-রচনাবলী ছেলেটি বেশ সপ্রতিভ । সে ঘরে ঢুকিয়া দেয়ালে একটা ছবি দেখিয়াই জিজ্ঞাসা করিল, “এ কার ছবি ?” বিনয় কহিল, “এ আমার এক জন বন্ধুর ছবি ।” ছেলেটি জিজ্ঞাসা করিল, "বন্ধুর ছবি ? আপনার বন্ধু কে ?” বিনয় হাসিয়া কহিল, “তুমি তাকে চিনবে না। আমার বন্ধু গৌরমোহন, তাকে গোরা বলি । আমরা ছেলেবেলা থেকে একসঙ্গে পড়েছি।” “এখনো পড়েন ?” ፲. “না, এখন আর পড়ি নে ৷” “আপনার স-ব পড়া হয়ে গেছে ?” বিনয় এই ছোটো ছেলেটির কাছেও গর্ব করিবার প্রলোভন সম্বরণ করিতে না পারিয়া কহিল, “হা, সব পড়া হয়ে গেছে ।” ছেলেটি বিস্মিত হইয়া একটু নিশ্বাস ফেলিল । সে বোধ হয় ভাবিল, এত বিদ্যা সেও কত দিনে শেষ করিতে পরিবে । বিনয় । তোমার নাম কী ? “আমার নাম শ্ৰীসতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ।” বিনয় বিস্মিত হইয়া কহিল, "মুখোপাধ্যায় ?” তাহার পরে একটু একটু করিয়া পরিচয় পাওয়া গেল । পরেশবাবু ইহাদের পিতা নছেন— তিনি ইহাদের দুষ্ট ভাইবোনকে ছেলেবেলা হইতে পালন করিয়াছেন । ইহার দিদির নাম আগে ছিল রাধারানী— পরেশবাবুর স্ত্রী তাহা পরিবর্তন করিয়া ‘স্বচরিতা' নাম রাখিয়াছেন । দেখিতে দেখিতে বিনয়ের সঙ্গে সতীশের খুব ভাব হইয় গেল । সতীশ যখন বাড়ি যাইতে উদ্যত হইল বিনয় কহিল, “তুমি একল! যেতে পারবে ?” সে গর্ব করিয়া কহিল, “আমি তো একলা যাঠ !” বিনয় কহিল, “আমি তোমাকে পৌছে দিই গে ।” তাহার শক্তির প্রতি বিনয়ের এই সন্দেহ দেখিয়া সতীশ ক্ষুব্ধ হইয়া কছিল, "কেন, আমি তে একলা যেতে পারি।” এই বলিয়া তাহার একল যাতায়াতের অনেকগুলি বিস্ময়কর দৃষ্টাস্তের সে উল্লেখ করিতে লাগিল । কিন্তু তবু যে বিনয় কেন তাহার বাড়ির দ্বার পর্যন্ত তাহার সঙ্গে গেল তাহার ঠিক কারণটি বালক বুঝিতে পারিল না । সতীশ জিজ্ঞাস করিল, “আপনি ভিতরে আসবেন না ?” বিনয় সমস্ত মনকে দমন করিয়া কহিল, “আর-এক দিন আসব।”