গোরা Σb-Φ পরেশ আসিলেন । সন্ধ্যা হইয়া আসিল । আজ রবিবারে উপাসনা-মন্দিরে যাইবার কথা । বরদাসুন্দরী বিনয়কে কহিলেন, “যদি আপত্তি না থাকে আমাদের সঙ্গে সমাজে যাবেন ?” ইহার পর কোনো ওজর-আপত্তি করা চলে না । দুই গাড়িতে ভাগ করিয়া সকলে উপাসনালয়ে গেলেন। ফিরিবার সময় যখন গাড়িতে উঠিতেছেন তখন হঠাৎ স্বচরিত চমকিয়া উঠিয়া কহিল, “ওই-ষে গৌরমোহনবাবু যাচ্ছেন।” গোরা যে এই দলকে দেখিতে পাইয়াছিল তাহাতে কাহারও সন্দেহ ছিল না । কিন্তু যেন দেখিতে পায় নাই এইরূপ ভাব করিয়া সে বেগে চলিয়া গেল । গোরার এই উদ্ধত অশিষ্টতায় বিনয় পরেশবাবুদের কাছে লজ্জিত হইয়া মাথা হেঁট করিল। কিন্তু সে মনে মনে স্পষ্ট বুঝিল, বিনয়কেই এই দলের মধ্যে দেখিয়া গোরা এমন প্রবল বেগে বিমুখ হইয়া চলিয়া গেল। এতক্ষণ তাহার মনের মধ্যে যে-একটি আনন্দের আলো জলিতেছিল তাহা একেবারে নিবিয়া গেল । সুচরিতা বিনয়ের মনের ভাব ও তাহার কারণটা তখনই বুঝিতে পারিল, এবং বিনয়ের মতো বন্ধুর প্রতি গোরার এই অবিচারে ও ব্রাহ্মদের প্রতি তাহার এই অন্যায় অশ্রদ্ধায় গোরার উপরে আবার তাহার রাগ হইল— কোনো মতে গোরার পরাভব ঘটে এই সে মনে মনে ইচ্ছা করিল। X8 গোরা যখন মধ্যাহ্নে থাইতে বসিল, আনন্দময়ী অস্তে আস্তে কথা পাড়িলেন, "আজ সকালে বিনয় এসেছিল । তোমার সঙ্গে দেখা হয় নি ?” গোরা খাবার থালা হইতে মুখ না তুলিয়া কহিল, "ই হয়েছিল।” আনন্দময়ী অনেক ক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন– তাহার পর কহিলেন, “তাকে থাকতে বলেছিলুম, কিন্তু সে কেমন অন্যমনস্ক হয়ে চলে গেল।” গোরা কোনো উত্তর করিল না । আনন্দময়ী কহিলেন, "তার মনে কী একটা কষ্ট হয়েছে গোরা । আমি তাকে এমন কখনো দেখি নি । আমার মন বড়ো খারাপ হয়ে আছে ।” গোরা চুপ করিয়া খাইতে লাগিল। আনন্দময়ী অত্যন্ত স্নেহ করিতেন বলিয়াই গোরাকে মনে মনে একটু ভয় করিতেন। সে যখন নিজে তাহার কাছে মন না খুলিত তখন তিনি তাহাকে কোনো কথা লইয়া পীড়াপীড়ি করিতেন না । অন্তদিন হইলে এইখানেই চুপ করিয়া যাইতেন, কিন্তু আজ বিনয়ের জন্ত তাহার মন বড়ো বেদন পাইতেছিল বলিয়াই কছিলেন, "দেখো, গোরা, একটি কথা বলি, রাগ কোরো না ।
